কক্সবাজারে সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হবে

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ ২০৩১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পৌঁছানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) দ্বিতীয় প্রেক্ষিত (২০২১-২০৪১) পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (২৫ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। দ্বিতীয় এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়ার আগে কিছু পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলো এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় যোগ করা হবে।

এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রী যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, তা সভা শেষে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আজ এনইসি সভায় যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেটি ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এর ফলে ২০৩১ সালে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৯ শতাংশ এবং ২০৪১ সালে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় চরম দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় ও মাঝারি দারিদ্র্যের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। উন্নত দেশে পৌঁছাতে আমাদেরকে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে বৈষম্য হ্রাস,দারিদ্র নিরসন ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ বছরে। এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর থেকে ২০৩১ সালে বেড়ে হবে ৭৫ বছর।

প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা গেলে এবং পরিকল্পনামাফিক যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হবে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে বড় করে তুলতে হবে। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হবে। কারণ এটা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের রুটের মধ্যে।’

তিনি বলেন, ‘সোনাদিয়া দ্বীপে জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সেজন্য গভীর সমুদ্রবন্দর করলে সেটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে; বাস্তুতন্ত্রে, ইকোলজিতে। তাই সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, সমুদ্রবন্দর অন্যত্র গড়ে তোলা হবে– এরকম একটা ধারণা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের দিয়েছেন।’

বয়স্ক ভাতা বাড়ানো, বিধবাদের পাশাপাশি স্বামী পরিত্যক্তদেরও ভাতা দেয়া হবে বলে সভায় জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘সম্পদের সুষম বণ্টনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ধনী-গরিবের পার্থক্য কীভাবে কমানো যায়, সেসব কথা চিন্তা করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা আরও বাড়াবেন। বয়স্ক ভাতা বাড়াতেই হবে। শুধু বিধবা নয়, স্বামী পরিত্যক্তদেরও ভাতা দেয়ার কথা তিনি বলেছেন বা দেবেন।’

নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০৩১ সালে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে। সেটি আবার বাড়তে বাড়তে ২০৪১ সালে গিয়ে হবে ৯.৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে চরম দারিদ্র্যের হার ২০২০ সালে ৯.৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০৩১ সালে পৌঁছাবে ২.৫৫ শতাংশে। সেটি পরিকল্পনার শেষ বছর ২০৪১ সালে কমে দাঁড়াবে ০.৬৮ শতাংশে। অন্যদিকে মাঝারি দারিদ্র্য বর্তমান বছরের ১৮.৮২ শতাংশ থেকে কমে ২০৩১ সালে দাঁড়াবে ৭ দশমিক শুণ্য শতাংশে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেষে ২০৪১ সালে এ হার হবে ৩ শতাংশের নিচে।

পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বৈষম্য হ্রাস, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র নিরসন,কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বহুমুখীকরণ, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকছে।

আরও খবর