এম. বেদারুল আলম :
ঈদগাও’র ভাদিতলার শফি আলম। সৌদি আরবের মদিনায় আবাসিক হোটেলে সার্ভিস বয় এর কাজ করেন ১২ বছর যাবৎ।
বৃহস্পতিবার হঠাৎ মদিনার তাইয়্যিবা কমার্শিয়াল সেন্টারের তার হোটেল আলসাফায় একদল পুলিশ অভিযান চালায়। তার সমস্ত ডকুমেন্ট থাকার পরও পুলিশ তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। সেদিন বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২০ জনকে আটক করে পুলিশ।
আকামাসহ সব কাগজপত্র থাকার পরও তাকে ছেড়ে দেয়নি। বর্তমানে মদিনার জেলখানায় আছেন শফি আলম। সেখান থেকে তাকে কয়েকদিনের মধ্যে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তার সাথে একই হোটেলে কাজ করা জহির উদ্দিন।
গত ১৫ ফেব্রয়ারি ফজরের নামাজ শেষে মক্কার ইলাফ হোটেলের পাশে দোকান খুলছিলেন লিংকরোডের মুহুরিপাড়ার রমজান আলী। তার দোকানের বিপরীত মার্কেটে অভিযান চালায় পুলিশ। ১২/১৪ জনকে ধরে নিয়ে যায় যার মধ্যে ৪ জনই কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রবাসিকে গাড়িতে তুলে নেয় সৌদি পুলিশ।
সৌদি আরবের জিজান শহরে থাকা আবদুল আওয়াল জানান, গেল ১২ দিনে ৬/৭ বার পুলিশ অভিযান চালিয়েছে প্রসিদ্ধ বেশক’টি শহরে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মরক্কোসহ বিভিন্ন দেশের বৈধ অবৈধ শ্রমিক যাদের পাচ্ছে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে মিয়ানমারের নাগরিকরা ও রয়েছে। যাদের আটক করা হচ্ছে তারা বেশির ভাগই যে পেশায় সেখানে গেছে সেই পেশায় কাজ না করে অন্য পেশায় কাজ করছে বলে জানা গেছে।
এরমধ্যে (হামেল মঞ্জিল) দারোয়ান এবং (সোয়াক) ড্রাইভার পেশার লোক বেশি রয়েছে বলে জানান সেখানে অবস্থারত কয়েকজন প্রবাসি। গেল ২ সপ্তাহে ২ শতাধিক কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার বৈধ-অবৈধ শ্রমিক চলমান অভিযানে আটক হয়েছে বলে দাবি কয়েকজন প্রবাসির। আটকের ভয়ে অনেকে বাসা থেকে বের হতেও পারছেনা বলে জানান তারা।
সৌদি সরকারের কঠোর অভিবাসন নীতি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠির বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য সেখানকার পুলিশ ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চালাচ্ছে বলে কয়েকজন প্রবাসি জানিয়েছেন।
গত ১০/১২ দিনে কক্সবাজারের প্রায় ২ শতাধিক বৈধ-অবৈধ শ্রমিক সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে চলমান অভিযানে আটক হয়েছে যারা এখনো সেখানকার কারাগারে রয়েছেন। অনেকে আবার দেশে ফিরেছেন।
কক্সবাজার সদরের ২৫ বছর যাবৎ সেখানে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ি জানান, গত ১০/১৫ দিনে নাক্কাসা, কাকিয়া, দাম্মাম, রিয়াদ, আবহা, বেহরাত, মদিনাসহ প্রবাসি অধ্যুষিত এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে সৌদি পুলিশের বিভিন্ন টিম। ফলে যারা সৌদি আরব যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের জেনেশুনে বিপদে না পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সেখানে অবস্থান করা প্রবাসিরা। প্রতিদিনই সৌদি আরবের পুলিশের বিভিন্ন টিম বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে কাগজপত্র যাছাই করার নামে গণহারে আটক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রবাসিদের দাবি।
চলমান ধরপাকড়ে কক্সবাজারের কতজন শ্রমিক ফেরত এসেছে এবং কত জন নারী শ্রমিক ফেরত এসেছে, যারা সেখানে আছে তাদের বর্তমান অবস্থা কেমন এ বিষয়ে জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কর্মকর্তা মোঃ নুরুল আবছারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কোন পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই বলে জানান।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমের বাজার সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। প্রতি দিনই দেশে ফিরছে শ্রমিকরা। সমস্ত কাগজপত্র বৈধ এবং সকল নিয়ম মানার পরও কেন শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়গুলো তদারকির দাবি জানিয়েছে উৎকন্ঠায় থাকা শ্রমিকরা। পাশাপাশি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়ে চলমান ধরপাকড় বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যারা জীবনের শেষ সম্বলটুকু বিক্রয় করে পরিবারকে হাসি ফুটাতে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন তাদের অনেকে ধরপাকড় এবং দেশে ফিরে আসার দুঃচিন্তায় মৃত্যুবরণ করার ঘটনাও ঘটছে।
প্রবাসিদের আয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হলেও তাদের কঠিন সময়ে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন রেমিটেন্স যোদ্ধারা। /দৈনিক কক্সবাজার
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-