শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑
কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় পল্লী চিকিৎসকদের প্রতি প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় চিকিৎসার নামে চলছে ভয়ানক এক ধরনের প্রতারণা। প্রশিক্ষণবিহীন ডাক্তার নামধারীরা চালাচ্ছে রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য। আরএমপি ও এলএমএ ৩/৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে রীতিমত তারা ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে নিরাপদে।
নামের পূর্বে ডাক্তার উপাধি ব্যবহার করে সাইন বোর্ড, ব্যানার, রঙ্গিন প্যাডে এর চাকচিক্য দেখে মনে হয় সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। আর পল্লী অঞ্চলের অসহায় দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্চে হাজার হাজার টাকা। অনেক পল্লী চিকিৎসক ফার্মাসিস্ট, ড্রাগিস্ট এন্ড ক্যামিস্ট পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের সাথে। অধিকাংশ পল্লি চিকিৎসকের কোন প্রশিক্ষণ নেই, নেই শিক্ষাগত যোগ্যতা তথাপিও তিনি চিকিৎসক।
সরে জমিনে ঘুরে শহরের পৌর এলাকা ছাড়াও গর্জনিয়া বাজার, কাউয়ারখোপ, বাংলা বাজার, কলঘর বাজার, রামু বাজার, মিঠাছড়ি, পিএমখালী, জোয়ারিয়ানালা বাজার, পানিরছড়া বাজার, উখিয়া, কোট বাজার, মরিচ্যা, টেকনাফ, ঈদগাহ বাজারে ভূয়া ডাক্তারদের দৌড়াত্ম্য লক্ষ্য করা গেছে। এসব চিকিৎসকের অনেকে আবার ঔষধের দোকান সাজিয়ে নিন্মমানের এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করছে রীতিমত রোগীদের কাছে।
এসব ভূয়া পল্লী চিকিৎসক যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল বিক্রি করছে উঠতি বয়সের যুবকদের কাছে। এতে করে সমাজে বাড়ছে ইভটেজিংসহ নানা ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ। এ সকল চিকিৎসক বিশেষ করে বিভিন্ন প্যাথলজি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে দালাল হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোগীরা পল্লী চিকিৎসকের কাছে সেবা নেয়ার জন্য গেলে তারা চিকিৎসার জন্য নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে তাদের নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পাঠিয়ে দেয় এবং চুক্তিভিত্তিক কমিশন হিসেবে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। অত্র জেলার বিভিন্ন বাজারে হাতুড়ে ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে অত্র অঞ্চলের কোন না কোন গ্রামের সাধারণ মানুষ।
হাতুড়ে ডাক্তাররা সামান্য লেখাপড়া করেই ডাক্তার বনে যাচ্ছে। এসব ডাক্তারের মধ্যে অনেকেই চটি বই সংগ্রহ করে তা থেকে কিছু ঔষুধের নাম মুখস্থ করে রোগীদের সেবা প্রদান করেন বলে অভিযোগ আছে। আবার কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পল্লী চিকিৎসকের ট্রেনিং করে, কেউ ভূয়া সার্টিফিকেট ম্যানেজ করে দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন।
প্রতিদিন তারা মেডিকেল অফিসারদের মত করে রোগী দেখছেন ও ঔষুধ সরবরাহ করছেন। এসব নামধারী ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে গ্রামের সাধারণ রোগীদের শরীরের সর্বনাশ হচ্ছে। যেখানে কম পাওয়ারের ঔষুধ লাগে সেখানে অজ্ঞতার কারণে উচ্চ পাওয়ারের ঔষুধের নাম, তারা জানে না কি ঔষুধে কী রোগ নিরাময় হয়, এমনকি তারা পড়তে পারে না ঔষুধের গায়ে লেখা নাম। শুধু তাই নয়, এরা কোন সরকারি ডাক্তারের দেওয়া ইংরেজিতে লেখা প্রেসক্রিপশনও পড়তে পারে না।
প্রেসক্রিপশন পড়তে না পারার কারণে অনেক সময় ভুল ঔষুধ দেয় সাধারণ রোগীদের। এসব ঔষুধ খেয়ে সাধারণ রোগীরা তাদের রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে তাদের শরীরের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এক পর্যায়ে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। একটি রোগ নিরাময় করতে গিয়ে বহু রোগের জন্ম হচ্ছে।
এতে মহিলারা প্রতারিত হচ্ছে বেশি। তাদের আর্থিক অপচয়ের পাশাপাশি শরীরের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা বলেন, ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিচালনা করেছি। ভূয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-