গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল ◑
মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা নিজ মুখে স্বীকার করে আবারও অন্ধকার জগৎ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে ২১ মাদক কারবারী।
এই মাদক কারবারীরা ৩ ফেব্রুয়ারী ভোর রাতে ২১হাজার ইয়াবা,১০টি অস্ত্র,৩০ রাউন্ড গুলি নিয়ে পুলিশের কাছে স্যালেন্ডার করেছে বলে পুলিশ সুত্রে জানা যায়। ৩ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) বিকাল ৩টার দিকে জেলা পুলিশের আয়োজনে টেকনাফ সরকারী ডিগ্রী কলেজ মাঠে কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশ ও মাদক কারবারীদের আত্মসমর্পন অনুষ্টান শুরু করা হয়।
উক্ত অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, মাদক পাচার অব্যাহত থাকার কারনে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে মিয়ানমারে। আর সেই টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে আসছে মরণ নেশা ইয়াবা। এই ইয়াবা গুলো সেবন করে দিনের পর দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দেশের যুব সমাজ। তিনি আরো বলেন যারা এখনো দেশের টাকা অবৈধ ভাবে পাচার করে মাদক পাচার অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের পরিনতি হবে খুবেই ভয়াবহ। মাদক বিরোধী চলমান এই অভিযান থেকে কেউ রেহাই পাবেন না। ফিলিপাইনে মাদক পাচার প্রতিরোধ করতে গিয়ে লাখো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে,তার তুলনায় এখানে খুবিই নগন্য। জঙ্গি,সন্ত্রাস দূর্নীতিবাজদের মতো আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পাওয়ার পর মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করা হয়। উক্ত অভিযানে এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের হাতে ২৮০ জন মাদক কারবারী নিহত হয়েছে। আমরা আর কোন মায়ের বুক খালি হোক বা কোন স্ত্রী বিধবা হোক তা-চাই না।
ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যদের উর্দ্দেশ্য করে তিনি বলেন,
কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের কোন সদস্যদের কোন আত্বীয়-স্বজন যদি মাদক কারবারে জড়িত থাকে তারাও পুলিশের অভিযান থেকে রেহাই পাবেনা বলে হুশিয়া দেন তিনি।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন,জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কমিউনিটি পুলিশিং’র জেলা সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক এডভোকেট তোফায়েল আহমদ, সাধারন সম্পাদক সোহেল আহমদ বাহাদুর,পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম, ইউএনও সাইফুল ইসলাম, টেকনাফ থানার (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস ও টেকনাফ কমিউনিটি পুলিশিং’র সভাপতি নুরুল হুদা ও মৌলভী কেফায়েত উল্লাহ শফিক সাহেব।
এদিকে আত্মসমর্পনকারী মোঃ তৈয়ব প্রকাশ (মধু তৈয়ব) আগত অতিথিদের তার বক্তব্যে বলেন, অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার জন্য মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়েছিলাম। কিন্তু এই মাদক ব্যবসা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কারন পুলিশ কঠোর অভিযান থেকে বাঁচতে এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়িয়েছি। এমনকি ঈদের নামাজও পড়তে পারিনি। অবশেষে এই অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসার জন্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করার জন্য সীদ্ধান্ত নিয়েছি।
তথ্য সূত্রে আরো জানা যায়, টেকনাফ থানার পুলিশ পরির্দশক (তদন্ত) এবিএমএস দোহার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল (সোমবার) ভোরে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের জাঁহালিয়া পাড়া মালির-মার ছড়া পাহাড়ী এলাকায় অভিযানে গেলে মাদক কারবারে জড়িত একদল অপরাধী হাত উঠিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে তাদের কাছ থেকে ইয়াবা কারবারিরা ২১ হাজার ইয়াবা,১০টি অস্ত্র ও ৩০টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং ৬ ও ৭।
টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারি ইয়াবা ব্যাসায়ীদের মাদক ও অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যামে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।
আত্মসমর্পণকারী ২১ ইয়াবা কারবারীরা হচ্ছে, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভী পাড়া এলাকার আবুল কালাম প্র: কালা সওদাগর (৪৯), মো: রিদোয়ান (২২), আব্দুর রাজ্জাক(৩০), আব্দুল আমিন প্র: আবুল(৩৯), বশির আহম্মদ(৪০), মো: রাশেল প্র: হাজী রাশেল (২৯), ফজল করিম(২৬), উত্তর লম্বরী এলাকার মো: তৈয়ুব প্র মধু তৈয়ুব(৩৮), মাঠ পাড়া বিজিবি ক্যাম্প এলাকার মো: জাহেদ উল্লাহ (২৪), সাবরাং ইউনিয়নের লেজির পাড়া এলাকার মো: ইদ্রিস(৫৭), খয়রাতি পাড়ার মো:সাদ্দাম(২৭), সিকদার পাড়া এলাকার আব্দুল গফুর(২৬), মো: হোসন প্র: কালু(২৭), টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার মো: ইসমাইল(৩১), পুরাতন পল্লান পাড়ার আব্দুল নুর(৩৯), হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলের ডেইল এলাকার নূর মোহাম্মদ(২৮), সিকদার পাড়া এলাকার ইমাম হোসেন(৩০), উলুচামারী কোনার পাড়া এলাকার মিজানুর রহমান (২৩), হোয়াইক্যং ইউনিয়ন উত্তর পাড়া এলাকার ফরিদ আলম(৪৮),মহেষখালীয়া পাড়া এলাকার শাহাদত হোসাইন(২৮) ও কক্সবাজারের ঝিলংজা পশ্চিম লারপাড়া এলাকার ইমাম হোসেন(৪৩)।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-