আবদুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন ◑
সম্প্রতি কক্সবাজারকে ‘ব্যয়বহুল’ শহর ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে কক্সবাজার শহরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। কিন্তু পণ্য ক্রয়ের সক্ষমতাসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বেকায়দায় পড়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য বাড়াবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘ব্যয়বহুল শহর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। কিন্তু যারা নিম্নআয়ের মানুষ এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত, তাদের কষ্টকর জীবনযাপন করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য, যাতায়াত ও বাড়িভাড়াসহ সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সাধারণ নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এরপর আবার সরকারি এই ঘোষণা, এর ফলে ফের বাড়িভাড়া, যানবাহন ভাড়া ও দ্রব্যমূল্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে।’
কক্সবাজারকে ব্যয়বহুল শহর ঘোষণার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘সরকারি এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে যেন সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারণী মহল যেন সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচকতার পদক্ষেপ নেয়।’
একই সুরে কথা বলেছেন কক্সবাজার চেম্বার অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। তিনি বলেন, ‘সরকারি এই ঘোষণার ফলে সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ধারা বিরাজমান, তাতে অসাধু বা সুযোগ-সন্ধানী ব্যবসায়ীরা ঘোষণাটিকে পুঁজি করে ফায়দা হাসিল করতে পারে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা মনে করেন- সরকার যদি সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে ঘোষণাটি দিয়ে থাকে, তাহলে এটার একটি মেকানিজম প্রণয়ন করা দরকার। সাধারণ মানুষ যাতে ঘোষণটির সুফল পেতে পারে সেটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলারও একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) কক্সবাজার শহর বা পৌর এলাকাকে ‘ব্যয়বহুল’ ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার শহর বা পৌর এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিসহ বাড়িভাড়া, যানবাহন ভাড়া, খাদ্য ও পোশাক সামগ্রীসহ অন্যান্য ভোগপণ্যের দাম বিবেচনায় কক্সবাজার শহরকে ‘ব্যয়বহুল’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ইতোপূর্বে ‘ব্যয়বহুল’ এলাকা ঘোষিত ঢাকাসহ অন্য এলাকাগুলোতে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল-বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। এখন থেকে কক্সবাজারের চাকরিজীবীরাও তা পাবেন। বর্তমানে এই হার ৪৫ শতাংশ। এছাড়া টিএ-ডিএসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়বে।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত গত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতেই মূলত এই ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। ওই সম্মেলনে জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন- বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আসার পর অসংখ্য দেশি-বিদেশি সংস্থা কাজ শুরু করে। এতে কক্সবাজারে থাকা-খাওয়ার খরচ বেড়ে গেছে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর আর্থিক চাপ পড়েছে। এসব বিবেচনায় কক্সবাজার শহর বা পৌর এলাকাকে ‘ব্যয়বহুল’ ঘোষণার প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘একে তো কক্সবাজার পর্যটন শহর, অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে অসংখ্য দেশি-বিদেশি সংস্থা কাজ করছে। এতে বাসস্থান, যাতায়াত, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ভোগপণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ সর্বক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেছেন, ‘বাড়িভাড়া বলতে গেলে প্রায় দ্বিগুণ, খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছে। পর্যটন ও রোহিঙ্গা সংকটসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে এ ধরনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-