এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া:
বাসে চড়ে মা-বাবার সঙ্গে নানার বাড়ি যাচ্ছিলো চার বছরের ছোট্ট রাহিন। তবে নানার বাড়ি পৌঁছানোর আগেই চট্টগ্রামের পটিয়ার শান্তিরহাটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় রাহিনের মা-বাবা দু’জনই। অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শিশু রাহিন। মুহূর্তের দুর্ঘটনাটি শুধু একটি সাজানো সংসার ছিন্নভিন্ন করে দেয়নি, শিশুটিকে করে দিয়েছে ‘এতিম’।
জানা যায়, শুক্রবার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে রাহিনকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে পটিয়ার একটি লোকাল বাসে ওঠেন পরিবহন ব্যবসায়ী জাহিদ। কোলেই ছিল ছোট্ট রাহিন। কিন্তু বাসে উঠার আধ ঘণ্টার মাথায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহত হন জাহিদ ও তার স্ত্রী সুলতানা নিগার। তবে সৌভাগ্যক্রমে সামান্য আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যায় তাদের কোল জুড়িয়ে রাখা চার বছরের ছেলে সন্তান রাহিন।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ছিল। ছোট্ট বাচ্চাটিকে উদ্ধারের পর যখন জানা গেল, নিহতদের দুজনই তার মা-বাবা। উপস্থিত কারও চোখের পানি ধরে রাখার শক্তি ছিল না। দুর্ঘটনায় পর নিহত জাহিদের পরিচয় প্রথমে জানা যাচ্ছিল না। পরে তার পকেটে পাওয়া ব্যাংকের এটিএম কার্ড থেকে তার ঠিকানা উদ্ধার করা হয়।
নিহত জাহিদ হোসাইন (৪২) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে। স্ত্রী নিগার সুলতানা (৩০) চিটাগাং গ্রামার স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
জাহিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বাদ মাগরিব নগরের চকবাজার প্যারেড মাঠে নিহত দম্পতির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার সকালে নিজ গ্রাম চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিলে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তাদের নামাজে জানাযায় হাজারো মানুষের অংশগ্রহন করেন। এসময় আশপাশের এলাকায় এক হৃদয়বিচারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
মহাসড়কের দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস পটিয়া শান্তিরহাট এলাকায় পৌঁছলে পটিয়াগামী বিসমিল্লাহ পরিবহন নামের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। লোকাল বাসটি আরেকটি বাসকে ওভারটেক করে যাওয়ার সময় দ্রুতগামী শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’
একই ঘটনায় নিহত হয়েছেন ওমর ফারুক (৪০) নামে আরেক ব্যবসায়ী। তার পরিবারেও রয়েছে তিন বছরের ছোট্ট কন্যা সন্তান। ওইদিন বান্দরবান যাওয়ার জন্য পটিয়াগামী ওই লোকাল বাসে উঠেছিলেন ফারুক। তিনি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার মৃত কোরবান আলীর ছেলে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-