মুুহিববুল্লাহ মুহিব :
ইয়াবার জন্য সারাদেশে আলোচিত কক্সবাজার। এ কলঙ্ক মুচনে কতটুকু এগিয়েছে জেলার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। শতাধিক ইয়াবা কারাবারি আত্মসমর্পণ করার পরও থামানো যায়নি ইয়াবা পাচার ও ব্যবসা। ইয়াবা কারবারিদের দমনে ২০১৮ সালের মে থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান এ বিশেষ অভিযানে গিয়ে ইয়াবা কারবারি, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫৬ রোহিঙ্গা সহ ২০৯ জন ইয়াবা কারবারি ও ডাকাত-সন্ত্রাসী।
অভিযানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৩৩ জন তার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৯ জন, র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩২ জন তার মধ্যে ১০ রোহিঙ্গা, বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৪ জন তার মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা।
তাদের মধ্যে বহুল আলোচিত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম ওরফে হাজি সাইফুল (৪৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
২০১৯ সালের ৩১ মে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টার দিকে টেকনাফ স্থল বন্দরের সীমানা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত সাইফুল। এসময় ঘটনাস্থল হতে ৯টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা এবং এক লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করে পুলিশ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজন মামলার তথ্য রয়েছে। ইয়াবা ডন সাইফুল নিহত হওয়ার খবরটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
২০১৯ সালের ২৫ জুন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় তিন রোহিঙ্গা মানবপাচারকারী। টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীয়াপাড়া নৌঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়াধীন গোলাপাড়া এলাকার আবদুল শুক্কুরের ছেলে কুরবান আলী (৩০), টেকনাফ পৌরসভার কে কে পাড়া এলাকার আলী হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (২৫) ও সুলতান আহমদের ছেলে আবদুর রহমান (৩০)।
২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রোহিঙ্গা শিবিরের আনসার ক্যাম্প থেকে অস্ত্র লুটকারী ডাকাত সরদার নুর আলম। দমদমিয়া ১৪ নং ব্রিজ সংলগ্ন বেত বাগান এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধে ঘটনা ঘটেছিল। যা আলোচনায় ছিল দেশজুড়ে।
২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর টেকনাফের আলোচিত রোহিঙ্গা ‘ডাকাত’ ও যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর মোহাম্মদ (৩৪) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। পরে তার কাছে পাওয়া বাংদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) নিয়ে চলে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা।
২০১৯ সালের ১৬ জুন কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতাসহ নিহত হয় ৩ জন। উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের ঢালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের রূপনগর এলাকার মো. ইউনূছের ছেলে রাশেদুল ইসলাম সৌরভ (২২)। নিহত সৌরভ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক। এ ছাড়া বন্ধুকযুদ্ধে নিহত অপর দুইজন হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার গবি সোলতানের ছেলে দিল মোহাম্মদ (৪২), ও চট্টগ্রামের আমিরাবাদের মাস্টারহাট এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪২) বলে জানা যায়।
এছাড়াও ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫২৮ ইয়াবা, ২৪.৩২৯ লিটার দেশীমদ, ২৭৩ বোতল বিদেশী মদ, ৮৫৫ বোতল হুসকি, ১৩৯৮ বোতল বিয়ার, ৪৮৪ বোতল ফেন্সিডিল, ৯০.৯০০ কেজি ১৬২ পুরিয়া গাঁজা ও ১৩.৬৫০ কেজি শীশা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২ হাজার ২৬০টি আসামী ৩ হাজার ২০৩ জন। এছাড়াও ৬৯৭ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩৭৯ টি আসামী ৭৩৩ জন। যা অন্যান্য বছরের চেয়ে রেকর্ড বলে ধারণা কর্মকর্তাদের।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বিশেষ অভিযান শুরুর পর থেকে মাদক নির্মুলের জন্য পুলিশ সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। ইয়াবা, অস্ত্রসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত রাখবে পুলিশ।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিএসসি কমান্ডার মেজর মো. মেহেদী হাসান বলেন, জেলা মহেশখালী ও টেকনাফে ইয়াবা অস্ত্র উদ্ধার ও দমনে চেষ্টা চলছে। বিশেষ অভিযানে ভাল সফলতাও এসেছে। আগামী দিনগুলোতে আমরা আরও অভিযান বৃদ্ধি করবো। ইতিমধ্যে ডাকাত হাকিমের আস্তানায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-