- সাড়ে চার শতাধিক ভবনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের বাণিজ্যিক শাখার ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৬৯ টির।
মুুহিবুল্লাহ মুহিব :
প্রায় দুই দশক ধরে পর্যটনের নামে অপিরকল্পিত ভাবে বড় বড় ইমারতে ঢেকে দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের পুরো সমুদ্র সৈকত। সৈকতের বালিয়াড়ির উপর তৈরী হয়েছে বিখ্যাত সব হোটেলের স্থাপনা। রয়েছে ছোটখাট হোটেল মোটেলও।
এছাড়াও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নামে স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে ঝুপড়ি দোকানও। সৈকতকে সংকটাপন্ন ঘোষণা করে ১৯৯৯ এ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে নির্দেশনা আসে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি প্রশাসনের হেয়ালিতে।
উল্টো নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে সৈকত জুড়ে দাম্ভিকতা আর প্রভাবের জোরে ১৫ কিলোমিটার বেশি এলাকায় ছড়িয়েছে ফাইভ স্টার, ত্রি স্টার মানের হোটেলের বিস্তার। তাছাড়াও রয়েছে অসংখ্যা অনুমোদনহীন হোটেল-মোটেল।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, শহরের হলিডে মোড় থেকে কলাতলী পর্যন্ত গড়ে উঠা প্রায় সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেলের মধ্যে জেলা প্রশাসনের বাণিজ্যিক শাখার ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৬৯ টির। বাকি সবাই জেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গড়ে তুলেছে বড় বড় ইমারত। দফায় দফায় উচ্ছেদ করার পরও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হয় প্রশাসন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, প্রশাসনের অবহেলাই এর একমাত্র কারন। প্রশাসন অভিযান কার্যকর করলে তা এতোদিনে একটি ফলাফল আসতো।
কক্সবাজার আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, সরকার ১৯৯৯ সাল থেকে ইসিএ এলাকা ঘোষণা করার পরও কিছু কিছু স্থাপনা গড়ে উঠেছে সৈকতের বাড়িয়ালিতে। এটা সম্পুর্ণ প্রশাসনের ব্যর্থতা। এরা ব্যবস্থা নিতে অবহেলা করায় এসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
চার শতাধিকেরও বেশি নির্মিত স্থাপনার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেলের একটিতেও নেয় পরিবেশ ছাড়পত্র। নোটিশ দিচ্ছি, অনেক সাড়া দিলেও বেশীর ভাগই থেকে যায় ধরা-ছোয়ার বাইরে। অনেকে মানেনি বিল্ডিং কোডও।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, প্রশাসনকে বার বার অনুরোধ করার পরও প্রশাসন এসব স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে আজকের কক্সবাজার দেখতে হচ্ছে। না হলে বিশে^ও অন্যান্য সমুদ্র সৈকতের মতোই হয়তো দেখতাম আমরা।
তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব-পর্যটন সেল) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, যেহেতু উচ্চ আদালতের রায় এসেছে স্থাপনা নির্মান বন্ধে। তাই আদেশের কপি হাতে পৌঁছালেই ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে। পরিকল্পনা করে যেভাবে উচ্ছেদ করা যায় আমরা সেভাবে করবো।
প্রসঙ্গত যে, সোমবার হাইকোর্ট কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার ইসিএ এলাকার জায়গার লিজ বাতিলের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ওইসব জায়গায় গড়ে উঠা স্থাপনাগুলোও গুড়িয় দিতে বলা হয়। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, ‘শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নয় জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারকে নীতিমালা তৈরি করতে হবে। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট লিভ টু আপিল খারিজ করে দেওয়া রায় বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। রায়ে পাঁচ জনের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।
১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিলের পর কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্ট থেকে কলা-তলী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এরপরও, ওই এলাকায় লিজ দিয়ে গড়ে তোলা হয় একের পর এক স্থাপনা।
এই নিয়ে পাঁচটি রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ে আদালত ১৯৯৯ সালের পর নেওয়া হোটেল সাইমন, সি গালসহ বড় বড় বেশ কিছু হোটেলের লিজ বাতিল করেন আপিল বিভাগ। রায়ে গুঁড়িয়ে দিতে বলা হয়েছে এসব স্থাপনা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-