কক্সবাজারে প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে সরকারি পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণের হিড়িক

সাইফুল ইসলাম,কক্সবাজার জার্নাল ◑


কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাচাঁমিয়ার ঘোনা ও গরুর হালদাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সরকারী পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরির মহোৎসব চলছে। এভাবেই দিন-দুপুুরে বেপরোয়াভাবে প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ করলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ভুমিকাই দেখা যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। মাঝে মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর নামমাত্র অভিযান দেখা গেলেও অভিযান শেষ হত না হতেই আবার শুরু করে দেই পাহাড় কাটা। এমনিই অভিযোগ রয়েছে যে, পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু অসাধু ব্যক্তি ওই সব পাহাড় খেকোদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের উদ্যেগেই নিচ্ছেনা। প্রশানসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যদি এভাবেই ম্যানেজ হয়ে যাই তাহলে কিভাবে পাহাড় কাটা বন্ধ হবে এমন প্রশ্ন ছোঁড়ে দিলেন স্থানীয়রা। এর কারণে একদিকে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে পাহাড়গুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। এসব বেপরোয়া পাহাড় কাটার কারণে প্রতি বছরই পাহাড় ধসে মারা যাচ্ছে অনেকেই। বিশেষ করে গত কয়েকমাস ধরে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকার বাচাঁমিয়ার ঘোনা ও গরুর হালদায় বড় বড় সরকারী পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ করে করছে এক ধরণেন অসাধু ব্যক্তিরা। ইতোমধ্যেই ওই এলাকায় পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে শত শত ঘরবাড়ি। এর কারণেই সবদিক দিয়েই আজ কক্সবাজাররের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের দিকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের ৭ ও ৬নং ওয়ার্ড দক্ষিন রুমালিয়ার বাচাঁমিয়ার ঘোনা ও আলির জাঁহাল গরুর হালদা এলাকায় বড় বড় পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ করছে। এমনকি অনেকেই আবার ভবন নির্মানেই করছে। সম্প্রতি কোন ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহুর্তে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গরুর হালদা এলাকায় যারা এভাবেই পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ করছে একই এলাকার মৃত মোঃ ইসলামের ছেলে মোঃ মুসলিম ও মোঃ সেলিম নামের স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বাচাঁমিয়ার ঘোনা এলাকায় রাশেদা ও রফিক নামে দুইজন। এছাড়া আরও অনেকেই কয়েকমাসের মধ্যে পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানায়। রাতারাতি এভাবে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মান শুরু ওই সব পাহাড় প্রভাবশালী পাহাড় খেকোরা। বিশেষ করে তারা টিনের বেড়া দিয়ে বসতবাড়ি তৈরি করার মিশন নিয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। কোন নিয়ন নীতির তোয়াক্কা না করে নিজ দায়িত্বে সরকারি পাহাড় কেটে এবং সরকারী জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ ওই সব ব্যক্তিরা। এভাবে বেপরোয়া পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি নেমে এসে নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শহরের প্রধান নদী বাঁকখালীও ভরাটের অন্যতম কারণ পাহাড় কাটা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ’ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, বেপরোয়াভাবে শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে ফেলায় পরিবেশ প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এর কারণে বড় বড় ফাটল ধরে পাহাড় ধসের ঘটনা বাড়ছে। গত বছরের ৩০ জুলাই সাহিত্যিকা পল্লিতে পাহাড় ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এর আগে ২৬, ২৭ ও ২৮ জুন জেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ৬৪ জন মারা গেছেন। তারপরও পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক এইচ.এম নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারে জায়গাজমির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভূমিদস্যুরা সরকারি পাহাড় দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দিয়ে পাহাড় দখল ও কাটার কারণে বন বিভাগও কিছু করতে পারছে না। পাহাড় কাটা বন্ধে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মাসব্যাপি যৌথ অভিযান পরিচালনা দরকার। প্রশাসনের দিক থেকে জানা যায়, দিনের বেলায় এখন কেউ পাহাড় কাটে না। রাতের বেলায় পাহাড় কাটার খবর পেলেই আমরা ছুটে যাই। কিন্তু জড়িতদের হাতেনাতে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো, নুরুল আমিন বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন সর্বদা সজাগ রয়েছে। যারা পাহাড় কাটায় জড়িত এবং সম্প্রতি বাড়িঘর নির্মাণ করছে তাদের বিরুদ্ধে খোঁজ-খবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর