অনলাইন ডেস্ক ◑ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বোঝাতে মিয়ানমার ও আশিয়ান একটি প্রতিনিধিদল বুধবার সকালে কক্সবাজার আসছে। তারা দুদিন কক্সবাজারে থাকবেন।রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরজমিনে দেখা ও ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে রাজী করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য চলতি বছরের জুলাই মাসেও মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছিল। তবে তাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো গতি আসেনি।
বুধবার সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে তারা কক্সবাজার বিমান বন্দরে এসে পৌঁছাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,মিয়ানমারের ৯ সদস্য ও আশিয়ানের ৭ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার সফরকালে ত্রাণ প্রত্যাবাসন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। এছাড়া উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেতাদের সাথেও বৈঠক করবেন।
উল্লেখ্য,২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৮২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নানা অজুহাতে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আরও অন্তত সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানানোয় ব্যর্থ হয় ওই উদ্যোগ। সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নতুন করে উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। ১৫ সদস্যের দলটি দুই দিন ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তরফে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও চলাফেরায় স্বাধীনতার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
এর নপরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দফা ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের দিন ধার্য করে ৩৪৫৫ রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা পাঠায় মিয়ানমার সরকার। প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্তরা ছিল টেকনাফের ২৩, ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০৩৭টি পরিবারের। তাদের মধ্যে ২৬ নম্বর শালবাগান ক্যাম্প থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গার নাম ছিল তালিকায়। আর ১৯ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত তিনদিনে ৩১৬ রোহিঙ্গা পরিবারের মতামত নেওয়া হয়।কিন্তু ৫টি দাবী না মানা পর্যন্ত মিয়ানমারে ফেরার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। সাক্ষাৎকারদাতারা জানান, রোহিঙ্গা স্বীকৃতি ও ভিটেমাটি ফিরে না পেলে ফেরত যাবেন না তারা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-