রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওদের অন্যরকম জীবন

পিয়াস সরকার ◑

ভয়াল সেই স্মৃতি। ভয়ঙ্কর দৃশ্য। গা শিহরে উঠা কাহিনী। আর এ কাহিনী তছনছ করে দিয়েছে ওদের জীবন। ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে সব। শরীর খুবলে খেয়েছে নিজ দেশের হায়েনার দল। ধর্ষণের পর করেছে উল্লাস। ওদের অনেকে হয়ে পড়েছে গর্ভবতী।

মানসিক নিপীড়নে অনেকেই হয়ে পড়েছেন ভারসাম্যহীন। অত্যাচার, আর নিপীড়ন থেকে নিজ ভূমি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয়

নেন বাংলাদেশে। বর্মী বাহিনীর ধর্ষনের শিকার সবার কোলে এখন ফুটফুটে শিশু। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও তাদের জীবন আলাদা।

বিদ্রুপের শিকার হতে হয় এই নারীদের। এমনই একজন কুমারী মাতা সন্তান নিয়ে এসেছেন হোপ হাসপাতালে। তিনি বসেছেন অন্যদের থেকে একটু দূরে। অন্য নারীরাও তার কাছে যেতে চাচ্ছেন না। তার সন্তানের সঙ্গে ভিড়তে দিচ্ছেন না নিজের সন্তানদের। এক এনজিওকর্মীর সহযোগিতায় কথা হয় ওই কুমারী মায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, সবাই তাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখেন। তার সন্তানের সঙ্গে মিশতে দেয় না কেউ। সহযোগিতার জন্য লাইনে দাঁড়ালে তাকে পিছনে ঠেলে দেয়া হয়। জানান, রাতে ছেলেরা সমস্যা করে। ঘরের চালে ঢিল দেয়। তার সন্তানকে সবাই ‘জারজ’ সন্তান বলে ডাকে।

আরেক গৃহবধূ ধর্ষনের শিকার হন মিয়ানমার আর্মির কাছে। তিনি বলেন, ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। দিনের পর দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। তার প্রশ্ন? আমি কি নিজে থেকে আর্মিদের কাছে গেছি? আমার কোনো দোষ ছিল না। তবুও আমার স্বামী আমাকে দোষী করে চলে গেছে? তিনি বলেন, আর্মিরা যখন গ্রামে ঢুকতো আমরা পালিয়ে যেতাম। সে রাতে আর পালানোর সুযোগ পাইনি। তিন জন আর্মি আমাকে ধর্ষণ করে। তুলে নিয়ে যায়। সেখানেও ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসি। বাংলাদেশে এসে তার প্রথম চিকিৎসা হয় মাসখানেক পর। এখনো নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। মানসিকভাবে এখনো বিপর্যস্ত।

তিনি বলেন, আমার মতো যারা আছেন সবাইকে বলতে গেলে এক ঘরে করে রেখেছে। আমার বাড়ির পাশের এক মেয়ে অবিবাহিত। নির্যাতনের শিকার হয়ে তার কোলেও সন্তান। প্রায়ই মারধর করে তার বাবা মা। আমি তাও বাড়ি থেকে বের হই। ওই মেয়ে বাড়ি থেকেও বের হতে পারে না। অবিবাহিত হওয়ায় তার কষ্টটা বেশি। তার সন্তানকে নিয়ে হাসাহাসি করে সবাই। তার নানা-নানি মনে হয় কোনোদিন কোলেও নেয়নি।

আরও খবর