কক্সবাজারের সর্বত্র নকল বীজে সয়লাব

মাহাবুবুর রহমান :

কথায় আছে ভাল ফলন পেতে হলে ভাল বীজ রোপন করতে হবে। কিন্তু সেই বীজই যদি নকল বা নি¤œমানের হয় তবে যতই পরিচর্যা করুক না কেন সেই বীজ থেকে ভাল ফলন আশা করা যায় না। আর বাজারে চাকচিক্য ভরা প্যাকেটে বিক্রি করা হচ্ছে নকল বীজ। জেলার বেশির ভাগ বীজ বিক্রি করা দোকানগুলোতে নকল ও নি¤œ মানের বীজ বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। এতে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

চকরিয়া উপজেলার বরইতলী এলাকার কৃষক আতিকুল ইসলাম জানান, আমার মাঠে এখন আমন ধান আছে। ধানে বীজ তলা তৈরি করার সময় চকরিয়ার একটি দোকান থেকে বীজ ধান কিনতে গেলে তারা আমাকে সরকারি ধানের চেয়ে ভাল মানের বলে সোনালী বীজ ধান দেয়। আমি সরল বিশ^াসে সেই বীজ ধান নিয়ে রোপন করি কিন্তু ধানের বর্তমান অবস্থা খুবই বাজে। কোন গোছাতে অল্প ধান হয়েছে আবার অনেক গোছাতে ধানই আসেনি। অথচ আমার পাশে সরকারি ৭৪ ধান লাগিয়েছে তাদের ধান খুবই সুন্দর হয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, চকরিয়া বাজারে ঝুলন বাবুর দোকানে সোনাল বীজ পাওয়া যায়। যা খুবই নি¤œ মানের তারা কৃষকদের সরকারি বীজ বিক্রি না করে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজ বিক্রি করে। এছাড়া কীটনাশকও নকল ও নি¤œমানের বিক্রি করে। এছাড়া বীজ বিপনী দোকানের মালিক জিয়া ও পাশের  দোকানের মালিক জামাল এরা সবাই সিন্ডিকেট করে শুধু ধান নয় নকল শাঁক সবজি, করলা, শসা, শীম বিচি সহ অনেক কিছু বিক্রি করে। সে জন্য কিছুদিন আগে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন তাদের দোকান থেকে প্রচুর নকল বীজ সহ কীটনাশক আটক করলেও পরে বিভিন্ন তদবিরে তারা ছাড়া পায়। তবে সমস্যা হচ্ছে এখানে যারা এগুলোর ব্যবসা করে তারা আজীবন করছে নতুন কেউ ব্যবসায় আসছেনা। ফলে প্রতারণা বন্ধ হচ্ছেনা।

উখিয়ার জালিয়া পালং এলাকার কৃষক আবদুস সবুর বলেন, বাজারে নকল বীজে এখন সয়লাব হয়ে গেছে। এছাড়া নকল কীটনাশক ঔষধ এবং সারও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমরা সাধারণ কৃষকরা মারাতœক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমি নিজেই উখিয়া বাজার থেকে নকল বীজ সার নিয়ে প্রতারিত হয়েছি। আমার জানা মতে, এখানে যে কয়েকটি বীজ বা সার বিক্রির দোকান আছে সবাই একটি সিন্ডিকেট। এদের সাথে সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত। এসব বীজ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও সেটা জেলা অফিস পর্যন্ত পৌঁছেনা। আবার পৌঁছলেও কোন ব্যবস্থা হয়না। সব কিছু টাকা দিলে ঠিক হয়ে যায়।

রামু  উপজেলার চাকমারকুল এলাকার কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকায় কাশেম বীজ ভান্ডার হচ্ছে সব চেয়ে চালু। সেখান থেকেই আমরা সব ধরনের বীজ বা কীটনাশক সংগ্রহ করি। তবে কিছুদিন আগে সেই দোকান থেকে সরকারি বিএডিসির বস্তাতে স্থানীয় হরি ও পাইজাম ধান ভরে বিক্রি করার সময় হাতে নাতে ধরা পড়ে প্রায় ৪০ বস্তা নকল বীজ। কিন্তু এরপরও সেই বীজ ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এখন কথা হচ্ছে আমরা কোথায় যাব। চাষীদেরতো বীজ কিনতে হবে আমরা কক্সবাজার গিয়ে বীজ কিনলে খরচ বেশি পড়ে। এখন স্থানীয় পর্যায়ে তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করছে। এর আগেই কাশেম বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিল কিন্তু কোন ব্যবস্থা হয়নি বা নতুন কোন ডিলার আসেনি। এদিকে মহেশখালী কুতুবদিয়া থেকেও বিভিন্ন কৃষক জানায় আমরা স্থানীয় বীজ ডিলারদের কাছে জিম্মি। আমাদের আর কোন পথও নেই। তারা কোন সরকারি বীজ বিক্রিই করেনা বরং সব স্থানীয় কোম্পানীর বীজ নিতে আমাদের বাধ্য করে।

এ ব্যাপারে জেলা বিএডিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ শাহজালাল বলেন, জেলার চলতি বুরো মৌসুমে আমাদের বীজ ধান বিক্রির জন্য বরাদ্ধ আছে ১৮৫ টন। কিন্তু এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৫২ টন। মূলতঃ ডিলাররা অধিক লাভের আশায় কৃষকদের স্থানীয় জাতের নিম্ন মানের বীজ কিনতে উৎসাহিত করে। এতে কৃষক প্রতারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে নিয়মিত অবহিত করছি। জানা গেছে জেলায় ৯৬ জন বীজ ডিলার আছে এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪ জন, চকরিয়াতে ২৭, পেকুয়াতে ৩, রামুতে ১৩, উখিয়াতে ১৫, মহেশখালীতে ১৪, কুতুবদিয়ায় ২ এবং টেকনাফে ৮ জন ডিলার আছে।

আরও খবর