অনলাইন ডেস্ক ◑ অবশেষে সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার। (রোববার, ১৫ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে এক ঐতিহাসিক পাইলফলহ প্রতিষ্ঠা করোতে যাচ্ছে সরকার। আজ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধি রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ শুরু হচ্ছে।
প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য মতে, এই তালিকার প্রথম দফায় শুধুমাত্র রাজধানীতেই রাজাকারের সংখ্যা ১১ হাজারের মতো। এদিকে রাজাকারদের তালিকার পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক।
রোববার সকালে সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনের ৬ তলায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে রাজাকারদের এই তালিকাগুলো ঘোষণা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একই সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও (প্রথম পর্ব) প্রকাশ করা হবে।
প্রথম দফায় তালিকায়া ঠাঁই পাওয়া এই ১১ হাজার রাজাকারের নাম প্রকাশের পর দেশের মহকুমা, জেলা, থানা পর্যায়ে রাজাকারের তালিকা করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন জেলার সরকারী নথিপত্র ঘেটে সে সময় যারা রাজাকারের ভাতা তুলেছেন এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেছেন। শুধু মাত্র তাদের দালিলীক তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে জেলা,থানা এবং মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে রাজাকারদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে।
এর প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সূফি আব্দুল্লাহ হিল মারুফ বলেন, রোববার যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী প্রকাশ করবেন তা নতুন কিছু নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অতীতের সংগ্রহ করা একাত্তরের রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ভাতা নিয়েছে বা যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, তাদের নাম-পরিচয়, ভূমিকাসহ যেসব তথ্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল সেই তথ্য ধরে করা তালিকাই যাচাই-বাছাই করে আবার প্রকাশ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে বলে মন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানা গেছে।
রাজাকার ছিল অর্ধলক্ষাধিক
‘রাজাকার’ একটি গালি এবং স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের প্রতীকী পরিচয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে ‘রাজাকার’ ছিল মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অধীন একটি সংস্থা বা আধাসামরিক বাহিনী। হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য এই সশস্ত্র আধাসামরিক বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। গঠন হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন এই বাহিনীর সদস্যদের তথ্য বা তালিকা মিলছে না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘রাজাকারের তালিকা’ প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি ‘রাজাকার বাহিনী’র তালিকা নাকি স্বাধীনতাবিরোধী দালালের তালিকা তা নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা পালনকারী ও গণহত্যায় সম্পৃক্ত অন্যান্য বাহিনী বা সংগঠনের মতো রাজাকার বাহিনীরও দায় চিহ্নিত হয়নি, কখনো বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত যে ১০৩ জনের বিচার শেষ হয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজাকারও আছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ ১৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘রাজাকারের তালিকা প্রথম পর্ব’ প্রকাশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত রেকর্ড এবং জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে এই ‘রাজাকারের তালিকা’ প্রকাশ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১১ হাজার জনের তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। এদের এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সংগঠনগুলোকে বিচারের আওতায় আনা হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপাতত তালিকা প্রকাশ করছি, সংগঠনের বিচারের বিষয়টিও পরে ভাবা যাবে।’
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সে অনুসারে যেসব রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের সময় থানা ও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা নিত তাদের তালিকা পাঠানোর জন্য গত ২১ মে সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে ২৮ আগস্ট আবারও তাগিদপত্র দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এরপর মাত্র ১০ জেলা থেকে ৩৯৯ জন রাজাকারের তালিকা আসে। সেসব তালিকায় যশোরে ১২৬, চাঁদপুরে ৯, মেহেরপুরে ১৬৯, শরীয়তপুরে ৪৪, বাগেরহাটে এক এবং নড়াইলে ৫০ জনের নাম আছে। খাগড়াছড়ি, মাগুরা, শেরপুর, গাইবান্ধা জেলায় কোনো বেতনভোগী রাজাকার ছিল না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘রাজাকারের তালিকা’ প্রকাশের সহায়তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠালে সেখান থেকে প্রায় ১১ হাজার ব্যক্তির একটি তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। জানা গেছে, স্বাধীনতার পর দালাল আইনে যেসব ব্যক্তির নামে মামলা হয়েছিল সেই মামলাগুলোর রেকর্ড থেকে ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালে কয়েক ভাগে বিভক্ত মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, পিডিপির নেতাকর্মীরা ব্যক্তি পর্যায়ে কিংবা ‘শান্তি কমিটি’, রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনী, আলশামস বাহিনীর ব্যানারে পাকিস্তান বাহিনীকে সহযোগিতা ছাড়াও হত্যা, ধর্ষণ, লুট, নির্যাতন চালিয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সে হিসেবে এই তালিকাকে ‘রাজাকার তালিকা’ নয়, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দালালের তালিকা বলা উচিত বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষকরা।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষক মেজর (অব.) এ এস এম শামসুল আরেফিন জানান, রাজাকার বাহিনী ছিল পুলিশের সহযোগী বাহিনী। এদের নিয়োগ দিয়েছে পুলিশ, ট্রেনিং দিয়েছে পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, রাজাকার বাহিনীতে ৫০ হাজার নিয়োগ দেওয়ার টার্গেট ঠিক করা হলেও শেষ পর্যন্ত ৩০ হাজারের মতো লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই তালিকা সংগ্রহও করেছিলেন। সেই তালিকা থেকে বিভাগভিত্তিক তালিকা কয়েক খণ্ডে ‘রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা’ গ্রন্থে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ১২-১৪ হাজার ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাজাকার’ একটি নির্দিষ্ট বাহিনী। তার সংজ্ঞাও নির্ধারিত। ‘রাজাকার’ বললে ওই বাহিনীর সদস্যদেরই বোঝায়। অন্যদের ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান জানিয়েছেন, ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর ‘রাজাকার’ তালিকা সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। আনসার বাহিনী ও জেলা-মহকুমা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে এটা পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ৬৪ জেলা ও আনসার হেডকোয়ার্টার্সে লিখেও সেই তালিকা পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘পরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, ওই তালিকায় প্রকৃত তথ্য আসেনি। কেউ প্রলোভনে পড়ে, কেউ আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে, কিংবা নানা কারণে অনেক নাম বাদ দেন। এই কারণে আমরা আর ওই তালিকার ওপর নির্ভর করতে পারিনি।’
আব্দুল হান্নান খান আরো বলেন, ‘আনসার বাহিনীতে যারা ছিল তারা তো ছিল বাঙালি। পাকিস্তান বাহিনীকে ধারণা দেওয়া হলো, এদের বিশ্বাস করা যায় না; এরা অনেকে পালিয়ে যেতে পারে, কেউ কেউ পালিয়েও গেছে। সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পাকিস্তান ভাবাপন্নদের নিয়েই বাহিনী গঠন করতে হবে। এর পরই রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এ কারণেই শহরাঞ্চলে যেখানে বিহারিরা ছিল সেখানে তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে; তেমনই রাজাকাররাও যেহেতু রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা নিত, প্রশিক্ষণ নিত, তাদেরও নির্দিষ্ট তালিকা থাকার কথা।’
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে ঘাতকদের সম্পর্কে পরিচিত করতে সব বাহিনীর মতো রাজাকার বাহিনীরও তালিকা তৈরি করা জরুরি। এই দাবি আমরা ১৯৯৫ সাল থেকে করে আসছি। তবে এই তালিকা আমলাদের দিয়ে হবে না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদের সম্পৃক্ত করেই এই তালিকা করতে হবে। না হলে এ নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হতে পারে।’
জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় জামায়াত নেতা এ কে এম ইউসুফের নেতৃত্বে ৯৬ জন দলীয় কর্মী নিয়ে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল রাজাকার সংগঠন। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান ২৮ মে ‘পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স’ জারি করে এই বাহিনীকে আনসার বাহিনীর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন। ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনীকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অধীনে ন্যস্ত করা হয়।
তবে স্থানীয়ভাবে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ‘শান্তি কমিটি’র তত্ত্বাবধানে ছিল রাজাকার বাহিনী। শান্তি কমিটির নেতারাই রাজাকার বাহিনীর সদস্য রিক্রুট করতেন। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল জামায়াতে ইসলামীর হাতে। রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ করা হয়েছিল জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ ইউনুসকে।
দলিলপত্র থেকে জানা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনসংলগ্ন মাঠে এবং মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট মাঠে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। পাকিস্তানি কূটনীতিক ও গবেষক হুসাইন হাক্কানির ‘বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি’ গ্রন্থের বরাত দিয়ে আজাদুর রহমান চন্দন তাঁর ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এক লাখ সদস্যের রাজাকার বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫০ হাজার নিয়োগ দিয়েছিল।’
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে চন্দন লিখেছেন, ‘রাজাকারদের দুই থেকে চার সপ্তাহের ট্রেনিং দেওয়া হতো। অস্ত্র হিসেবে দেওয়া হতো থ্রি নট থ্রি রাইফেল। প্রথম দিকে একজন রাজাকারের মাসিক বেতন ছিল ৯০ টাকা। তা বাড়িয়ে ১ ডিসেম্বর থেকে একজন রাজাকার সদস্যের মাসে ১২০ টাকা, রাজাকার প্লাটুন কমান্ডারের ১৮০ টাকা এবং রাজাকার কোম্পানি কমান্ডারের ৩০০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়।’ জেনারেল রাও ফরমান আলীকে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বরের এক রিপোর্টে বলা হয়, ওই সময় পর্যন্ত রাজাকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ হাজারে।
রাজাকারদের তৎপরতা ও অত্যাচারের মাত্রা এতই ব্যাপক ছিল যে এখন দেশ ও সমাজবিরোধী যেকোনো তৎপরতাকে ‘রাজাকারি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটকের সংলাপ ‘তুই রাজাকার’ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন এ প্রসঙ্গে বলেন, “মোটা দাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের আমি ‘রাজাকার’ নামেই অভিহিত করি। জাহানারা ইমামের ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল’ আন্দোলন শুরু হলে ‘রাজাকার’ নামটি সামনে আসে। হুমায়ূন আহমেদের ‘তুই রাজাকার’ও ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি সে আলবদরই হোক বা দালালই হোক, তাদের পরিচিতি হয়ে উঠেছে ‘রাজাকার’ হিসেবে।”
গবেষকদের মতে, তৎকালীন বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কেউ কেউ বাধ্য হয়েও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই সুযোগমতো মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দিয়েছে, কেউ কেউ অস্ত্র নিয়ে পালিয়েও গেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-