শাহজাহান চৌধুরী শাহীন ◑
কক্সবাজারের টেকনাফ শহরের প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছে বর্ণিল এক ফোয়ারা। প্রতিদিন বিকাল ৪টার পর ফোয়ারা চালানো হতো। রংবেরং এর আলোয় এ ফোয়ারায় চলতো পানির নাচন। তবে বর্ণিল এ ফোয়ারার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য এখন আর নেই। দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারাটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে নয়নাভিরাম ফোয়ারাটি সৌন্দর্য হারিয়েছে। ফোয়ারাটি ডাস্টবিনে পরিণত হওয়ায় রীতিমত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পথচারী ও পর্যটকরা এখন ফোয়ারার বদলে শুধু ডাস্টবিন, ব্যানার ও ফেস্টুন দেখতে পাচ্ছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শন এবং পৌরবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভার সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় নিজস্ব অর্থায়নে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ২০০৯ সালে সড়ক রাউন্ডিং-সহ ফোয়ারাটি নির্মাণ করা হয়। সেই বছরের ১৪ এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মো. ইসমাঈল ফোয়ারাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সুত্র মতে, ফোয়ারার স্থানটি চৌরাস্তা হওয়ায় প্রায় সময় দুঘর্টনা ঘটত বলেই পৌর কর্তৃপক্ষ দুঘর্টনা রোধ ও সৌন্দর্য বর্ধনকল্পে ফোয়ারাটি নির্মাণ করে। এতে দুঘর্টনা কমলেও ফোয়ারার সৌন্দর্য রক্ষিত হয়নি। পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, শোভাবর্ধনকারী ফোয়ারাটি সচল রাখতে বিদ্যুতায়নের জন্য ফোয়ারার নামে এবি ব্যাংকের নিচে বিদ্যুতের মিটার রয়েছে।
পাশাপাশি ফোয়ারাটিতে সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ করতে ওই ব্যাংকের পাশে গভীর নলকূপ স্থাপন ও পানি নিষ্কাশনে পাতাল ড্রেনও রয়েছে। সে সময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ মাস্টার রোলে একজন সুইপার দিয়ে ফোয়ারাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী সাধারণত প্রতিদিন বিকাল ৪ টার পরে ফোয়ারাটি চালু করে। তবে ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং এমপি-মন্ত্রীর টেকনাফ আগমনে বাড়তি সৌন্দর্য্যরে জন্য ফোয়ারাটি চালু রাখে। নির্মাণের পর তিন বছরই নিয়মিতভাবে নিজস্ব বিদ্যুত ও পানির সমন্বয়ে ফোয়ারাটি টেকনাফ শহরের সৌন্দর্য্যবর্ধনে ভূমিকা রাখে।
পরে নজরদারীর অভাবে আস্তে আস্তে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারাটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ফোয়ারাটি ময়লা-আবর্জনা পেঁচ রীতিমত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্টেশনের প্রবেশদ্বারে নির্মিত ফোয়ারাটি ডাস্টবিনে পরিণত হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারিয়েছে, অন্যদিকে পর্যটক ও সর্বসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
টেকনাফের বাসিন্দা ওমর ফারুক সোহাগ বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ২০০৯ সালে একটি গভীর নলকূপ সহ ফোয়ারা চত্ত্বরটি নির্মান করা হয়। রক্ষনা বেক্ষনের জন্য মাষ্টার রোলে একজন সুইপার নিয়োগ থাকলেও অজানা কারনে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে তা ডাস্টবিনে পরিনত হয়ে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিনত হয়েছে এই ফোয়ারাটি।
তিনি বলেন, গতবছর এই ফোয়ারা ভেঙ্গে আধুনিকায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু এবছরও কোন উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। পর্যটন মৌসুম দেশি-বিদেশী পর্যটক আসা শুরু করেছে। লোকজন ফোয়ারার সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে ময়লা পানিতে মাছির ভন ভন, মশার বিশাল আড়ৎ, নাক ছেপে ধরে দৌড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
টেকনাফ শহরের প্রবেশদ্বারে নির্মিত ফোয়ারাটি সংস্কারের মাধ্যমে আলোকসজ্জা করলে আরো বেশী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়বে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। পৌরবাসী এবং সচেতন মহল জরুরি ভিত্তিতে চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরুতে টেকনাফ শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে নয়নাভিরাম ফোয়ারাটি সংস্কার করার জোর দাবি জানিয়েছে।
টেকনাফ পৌরসভা মেয়র হাজি মো. ইসলাম জানান, ফোয়ারা তথা ঝর্নাটিকে সংস্কারের মাধ্যমে আবারো আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন উপায়ে এটি সংরক্ষণে পৌরবাসীকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-