নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ◑
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় কলেরা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে সনাক্ত করা হয়েছে ১৩৩ জন কলেরা রোগী। সেখানে স্থানীয় ৫৬ জন আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ৭৭ জন।
উখিয়া-টেকনাফে কলেরা রোগ নিয়ন্ত্রণে ফের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৫ জন জনগোষ্ঠিকে খাওয়ানো হবে কলেরা টিকা। এরমধ্যে অধিকাংশই স্থানীয় জনগোষ্ঠি। আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন। শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় জেলা ইপিআই স্টোরের সম্মেলন কক্ষে ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন (ওসিভি) ক্যাম্পেইন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রনজন বড়–য়া রাজন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উখিয়া-টেকনাফে ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন (ওসিভি) ক্যাম্পেইন ৫ম বারের মত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে এবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির চেয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠি বেশি থাকবে ওসিভি ক্যাম্পেইনের আওতায়।
এবারের ক্যাম্পেইনে কলেরা টিকা খাওয়ানো হবে ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৫ জনকে। এরমধ্যে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠি ৪ লক্ষ ৯৫ হাজার ১৯৭ জন আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮৮৮ জন। স্থানীয়দের ক্ষেত্রে ১ বছরের উর্ধ্বে সকল বয়সী লোকজন আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১ বছর থেকে ৫ বছরের নিচে শিশুরা ওসিভি টিকা পাবে।
উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠিকে টিকা খাওয়ানো ৮ ডিসেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে টিকা খাওয়ানো ৮ ডিসেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ ডিসেম্বর।
সিভিল সার্জন অফিসের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. জামশেদ বলেন, সর্বশেষ ওসিভি ক্যাম্পেইন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর। সেই ক্যাম্পেইনের আওতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ছিল বেশি। আর রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় কিছু সংখ্যক স্থানীয় লোকজনকে খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু এবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ওসিভি ক্যাম্পেইনের আওতায় কম থাকবে। বেশির ভাগ স্থানীয় লোকজনকে খাওয়ানো হবে কলেরা টিকা।
তিনি আরও বলেন, গত জানুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফে ১৩৩ জন কলেরা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৬ জন স্থানীয় আর ৭৭ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। উখিয়াতে কলেরা রোগী সনাক্ত হয়েছে স্থানীয় ৮ জন আর রোহিঙ্গা ১৩ জন। টেকনাফে কলেরা রোগী সনাক্ত হয়েছে স্থানীয় ৪৮ জন আর রোহিঙ্গা ৬৪ জন।
ডা. রনজন বড়–য়া রাজন বলেন, এবারের ক্যাম্পেইনে টিকাদান কেন্দ্র সকাল ৮ টা থেকে ৩ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকবে। ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য ব্যাপক কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সচেতনতা, মাইকিং, সভাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে। সফলভাবে ওসিভি ক্যাম্পেইন সম্পন্ন হলে কলেরা ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবে উখিয়া-টেকনাফ। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাইকে সঠিক সময়ে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মো. আলমগীর বলেন, নিরাপদ পানি এবং সঠিক পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার অভাবে কলেরা রোগ হচ্ছে। এটি একটি পানিবাহিত রোগ। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, উখিয়া-টেকনাফে গত এক বছরে ১৯১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে ১৩৩ জনের কলেরা রোগ সনাক্ত হয়েছে। তবে জেলার অন্যকোন উপজেলায় এখন পর্যন্ত কলেরা রোগি পাওয়া যায়নি। এই দুই উপজেলায় দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পুরো জেলাকে কলেরা থেকে নিরাপদ করা সম্ভব। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে সঠিক সময়ে কলেরা টিকা খাওয়ার আহ্বান জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-