রফিকুল ইসলাম ◑
কক্সবাজারের সবচেয়ে বেশি ধুলাবালিময় এলাকা উখিয়া-টেকনাফ। গত দুই বছরে বায়ুদূষণজনিত নানা রোগ ব্যাধিতে লোকজন অধিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। মহাসড়কের উখিয়া অংশে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন কঠিন অবস্থার মুখে পড়েছে।
জাতীয় মহাসড়ক-১ এর অংশ কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক। দীর্ঘ ৭৯ কি.মি. এ সড়কে উখিয়া উপজেলার অংশ প্রায় ২৭ কি.মি.। এ সড়ক দিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পূর্বে এত বেশি যানবাহন চলাচল করতো না। ২০১৭ সালে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার প্রবেশ ঘটে। সুনামির ন্যায় আসা মানব স্রোতকে বাংলাদেশ এক প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আশ্রয় দেয়।
২০১৭ সালের আগে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যেখানে ঘণ্টায় কয়েক শত যানবাহন চলাচল করতো। সেই সড়ক দিয়ে রোহিঙ্গা আসার পর মিনিটে কয়েক শত হাল্কা থেকে অধিক ভারী যানবাহন যাতায়াত বৃদ্ধি ঘটে। সারাদেশে থেকে উখিয়া পর্যন্ত ১৬-২০ চাকার ভারী যানবাহন, লরি চলাচল করছে ব্যাপক হারে। ১৮ ফুট প্রস্থের এ সড়কের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা ১৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত।
অথচ এ দুবছরে এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করছে ৫০-৬০ টনের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন। স্বভাবতই সরু সড়কটির সর্বত্র ভেঙ্গে চুরমার হয়ে পড়ে। এ সড়কটি ক্রমেই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে পরিণত হয়। প্রতিদিন এ জাতীয় মহাসড়কের উখিয়া অংশে কোন না কোন যানবাহন ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। গত দুই বছরে এ সড়কে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনায় কয়েক শত মানুষ হতাহতের শিকার হয়েছে। ভাঙ্গা চোরা সড়কের সর্বত্র ধুলাবালি।
এছাড়াও মোট ৩৪টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের মধ্য ২১টি ক্যাম্পের অবস্থান উখিয়ায়। এসব ক্যাম্প স্থাপনে উদ্বাস্তুদের শেড, রাস্তা, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অফিসসহ অন্যান্য স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা, মাটি কাটা-ভরাট প্রভৃতি কাজে নানাবিধ পরিবেশ ও প্রতিবেশগত দূষণের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে ও তা অব্যাহত রয়েছে।
উখিয়ার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার। পক্ষান্তরে উখিয়ায় ২১ আশ্রয় ক্যাম্পে উদ্বাস্তু আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সবকিছু মিলিয়ে উখিয়ায় অন্যান্য পরিবেশগত দূষণের সাথে বায়ু শব্দ দূষণের মাত্রা অধিক হারে বাড়ছে।
উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেরাজ হোসেন চয়ন বলেন, গত দুই বছরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বায়ু দূষণজনিত কারণে সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ নানা রোগ ব্যাধির উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে তিনি জানান।
এদিকে, বিবিসি এক খবরে জানায়, বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়। সহজ করে বললে ভারতের দিল্লি, বাংলাদেশের ঢাকা ও আফগানিস্তানের কাবুল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। আর যদি দেশের কথা বলা হয় তাহলে বিশ্বে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ প্রথম। এরপর অবস্থান পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানের।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দূষণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারভিজুয়্যাল এসব তথ্য জানায়। বুধবার (৬ নভেম্বর) খবরটি প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ২০১৮ সালের দূষণের মাত্রা নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৩০টি শহরের মধ্যে ২২টি ভারতের। বাকি ৮টি শহর পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও চীনে অবস্থিত। বেইজিং এই তালিকার ১২২ নম্বরে।
দিল্লির বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পার্টিকেল ম্যাটার বা পিএম-২.৫) পরিমাণ ১১৩.৫, ঢাকায় ৯৭.১ ও কাবুলে ৬১.৮। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ। কারণ, প্রতি ঘনমিটারে পিএমের স্বাভাবিক মাত্রা ১ থেকে ১২ পর্যন্ত।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-