কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে অসুস্থ গরু-ছাগল রাতে জবাই, দিনে মাংস বিক্রি

শাহীন মাহমুদ রাসেল ◑

কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ আর রোগাক্রান্ত গরু ছাগলের মাংস। কম বেশী প্রতিটি কসাই তাদের বাসা বাড়িতে ব্যবহার করছে ডিপফ্রিজ। সকালে বিক্রির জন্য রাতে জবাই করা মাংস ফ্রিজে রাখছে তারা।

বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ডাক্তারি ফিটনেস সনদের প্রয়োজন থাকলেও তার কোনো তোয়াক্কাই করে না মাংস ব্যবসায়ীরা। এতে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহক অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে স্থানীয়দের স্বাস্থ্য।

জনসাধারণের অভিযোগ, অধিকাংশ কসাই অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত গরু লোক চক্ষুর অন্তরালে রাতের অন্ধকারে জবাই করে সকালে বস্তাভর্তি মাংস বাজারে নিয়ে ফ্রেশ গরুর মাংস বলে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে। এসব পশু জবাই ক্ষেত্রে মানা হয়না কোন আইন। বাজার কর্তৃপক্ষের নিধারিত জায়গায় পশু জবাই করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে রাতের বেলা কসাইদের বাসা বাড়ীর পাশে বাশঁ-ঝাড় অথবা ঝোপের আড়ালে।

জবাইয়ের আগে প্রত্যেকটি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস কর্তৃক দেখভাল করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। রোগাক্রান্ত গরু কম দামে কিনে বেশি দামে মাংস বিক্রি করছে মাংস ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সদর ও রামুর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। প্রতি কেজি ছাগলের মাংসের দাম ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাপ্তাহিক হাট-বাজার ছাড়াও স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন জবাই করা হয় গরু, মহিষ, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু। এর মধ্যে বেশিরভাগ পশু বাইরে থেকে জবাই করে বাজারে আনা হয়। কোনো পশু অসুস্থ হলে পশুর মালিক মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। একটি মূল্য ৫০ হাজার টাকা হলেও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কমমূল্যে ক্রয় করে মাংস ব্যবসায়ীরা। এই পশু জবাই করে বাজারে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে এর অধিকাংশই চলে যায় স্থানীয় খাবার হোটেলে। জবাই করা পশুর যেসব অংশ মানুষের খাবার অযোগ্য সেগুলো এখন আর বাদ দেয়া হয় না। বিধান লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী, কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড, কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান থাকলেও এ আইনের তোয়াক্কা করছেন না এসব মাংস ব্যবসায়ী।

মাংস ক্রেতা বেলাল হোসেন, মিজান ভুট্টো, জাহাঙ্গীর, হোসাইন মোরশেদ, ইসলামসহ অনেকে বলেন, গরুটি সুস্থ না অসুস্থ তা বোঝার কোনো উপায় নেই। অনেক সময় গাভী গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করে। তবে এসব যাদের দেখার দায়িত্ব তারা দেখছেন না।

তারা আরও বলেন, এসব অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রি করা মোটেই কাম্য নয়। চড়া মূল্যে কিনা মাংস আমরা একটু ভালো খেতে চাই। তাই উপজেলা প্রশাসনের নজরদারী প্রয়োজন না হলে অচিরেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে এই এলাকার মানুষ।

এদিকে, কক্সবাজারের বিভিন্ন হাট-বাজারে ও পাড়া-মহল্লায় ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই রোগাক্রান্ত গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ জবাই করে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম বলেন, প্রায়ই কসাইরা পশুর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আসে না। নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অসুস্থ পশুর মাংস খেলে মানুষের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজুর রহমান বলেন, মাংস ক্রেতাকে এমন ভাবে প্রতারিত করলে মাংস ব্যবসায়ীদের (কসাই) ছাড় দেয়া হবেনা। তবে কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাহলে তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, বাজারে রোগাক্রান্ত গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস বিক্রি হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

আরও খবর