সীতাকুণ্ড উপকূলে জীবিত ও বাঁশখালী উপকূলে মৃত রাজকাঁকড়া উদ্ধার

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে প্রতিদিন মারা পড়ছে রাজকাঁকড়া!

আহমদ গিয়াস,কক্সবাজার •

বৃহস্পতিবার সীতাকুন্ড উপকূল থেকে জীবিত ও শুক্রবার বাঁশখালী উপক‚ল থেকে মৃত উদ্ধার রাজ কাঁকড়া।

চোরাচালানী সিন্ডিকেটের হাতে লুটপাট ছাড়াও প্রতিদিন মাছ ধরা ট্রলারে মারা পড়ছে বঙ্গোপসাগরের একমাত্র ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ নামে পরিচিত ৪৫ কোটি বছরের আদি প্রাণী রাজকাঁকড়া।

বঙ্গোপসাগরে লবস্টার শিকারী শিলজালের বোটে ধরা পড়া কয়েক শত রাজকাঁকড়া প্রতিদিন মারা পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূল থেকে একটি জীবিত রাজকাঁকড়া ও বাঁশখালী উপকূল থেকে মৃত রাজকাঁকড়া উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

পরে তারা সেই প্রাণীর ছবি তুলে এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠান। যাদুকরী ঔষধী গুণের কারণে বিশ্ববিখ্যাত ও ‘লিভিং ফসিল’ হওয়ার কারণে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ অন্তর্ভুক্ত এই প্রাণীটি নিয়ে দৈনিক আজাদীতে গত ১৬ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়া একটি জীবিত রাজকাঁকড়া দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন স্থানীয় মৎস্যজীবী তপন দাস সহ অন্যান্য জেলেরা। পরে তারা দৈনিক আজাদীর সাথে যোগাযোগ করেন।

তপন দাস বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে প্রায়ই ধরা পড়ে রাজকাঁকড়া। এগুলো অনেক সময় জালের সাথে অথবা মাছের সাথে সৈকতে চলে আসে এবং প্রায়ই মারা পড়ে কিন্তু আমরা এই প্রাণীটির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরে আজাদীর সাথে যোগাযোগ করে সাগরে অবমুক্ত করে দিই। এখন থেকে আমরা প্রাণীটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করব।’

অন্যদিকে শুক্রবার রাতে বাঁশখালীর ছনুয়া উপকূল থেকে একটি মৃত রাজকাঁকড়া উদ্ধার করেন স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন। প্রাণীটি সাগর থেকে ঘাটে ফেরা একটি ট্রলারে জীবিত আসার পর সৈকতে মারা গেছে বলে জানান তিনি।

বাঁশখালী ছনুয়ার ব্যবসায়ী শমসের শরিফী বলেন, ‘আমরা প্রাণীটির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন জেলেদের মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য আমরা স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালনের জন্য আরো সংগঠিত হচ্ছি।’

‘হর্সশো ক্র্যাব কনজারভেশন গ্রুপ, বাংলাদেশ’-এর স্বেচ্ছাসেবী দলের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সমুদ্র) আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরের সীতাকুণ্ড থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলে রাজকাঁকড়ার অন্তত ১০টি আবাসস্থল চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া সুন্দরবন এলাকাতেও একটি বড় স্টকের আবাসস্থলের খবর পাওয়া গেছে। সামনে এদের প্রজনন মৌসুম। তখন এগুলো আরো ঝাঁকে ঝাঁকে মারা পড়ার আশংকা রয়েছে। আমরা এখনই দৈনিক ৩শ’ থেকে ৪শ’ রাজকাঁকড়া মারা পড়ছে বলে ধারণা করছি।’

এ বিষয়ে উক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটি সুপারিশমালা প্রেরণেরও প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজাঁকাকড়া সহজে মরে না। কোনো কারণে আহত হলে মারা যেতে পারে অথবা কোনো প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে।’ তাই সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রাণীটিকে বাঁচাতে হবে এবং এ লক্ষে বোট মালিক সমিতি স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, অলৌকিক ঔষধী গুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত দামী রাজকাঁকড়া বা হর্সশো ক্র্যাব দেশের সমুদ্র উপকূল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই প্রাণিটির রক্ত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের লোভে প্রকৃতি থেকে ধরে গোপনে পাচার করে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি গ্যালন রক্তের দাম ৬০ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাময়িকী ও গবেষণাপত্রের বরাতে বলা হয়েছে।

আরও খবর