নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গত কয়েকদিন বাংলাদেশের বাস-ট্রাক শ্রমিকরা যে ‘কর্মবিরতি’ পালন করেছেন, সেখানে চলচ্চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিকে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগ উঠেছে।
ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে কিংবা কুশপুত্তলিকা তৈরি করে সেখানে জুতার মালা দেয়া হয়েছে।
এসব ছবি মি: কাঞ্চনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, শ্রমিকদের কর্মকাণ্ড তাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে।
“কখনো-কখনো খারাপ লাগে। এতোটাই খারাপ লাগে যে যাদের জন্য আমি এতো কিছু জলাঞ্জলি দিয়েছি কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়। আমি আমার সিনেমার ক্যারিয়ার শেষ করেছি নিরাপদ সড়কের জন্য। আমার সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করেছি”।
এসব ছবির মাধ্যমে মি: কাঞ্চনের বিরুদ্ধে বাস-ট্রাক শ্রমিকদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতি শ্রমিকদের এতো ক্ষোভের কারণ কী?
মি: কাঞ্চন বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের জন্য যে আন্দোলন সেটি তার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। তার প্রতি শ্রমিকদের ক্ষিপ্ত হবার এটিই কারণ বলে মনে করেন তিনি।
“শ্রমিকরা মনে করে, সড়ক দুর্ঘটনায় কারো হাত নেই। এটা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। আমি কেন বিষয়টা নিয়ে বলবো? তারা এটাই মনে করে,” বলছিলেন মি: কাঞ্চন।
তবে ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম স্বীকার করেন যে সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে মি: কাঞ্চন বিভিন্ন সময় টেলিভিশনে নানা মন্তব্য এবং দাবি তোলার কারণে শ্রমিকদের কেউ-কেউ তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হতে পারে।
মি: ইসলাম বলেন, “আইন পাশ করব সরকার। উনি (ইলিয়াস কাঞ্চন) যেখানে বলে আইন পাশ করলো না কেন, আরো আইন হওয়া উচিত – এগুলো অনেক সময় শ্রমিকরা মনে হয় শোনে, সেজন্য আমার মনে হয় একটা উত্তেজনা আইসা পড়ে।”
মি: কাঞ্চন মনে করেন, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার পেছনে মালিক-শ্রমিক নেতাদের উস্কানি রয়েছে।
“এই শ্রমিকরা নেতাদের কথা দ্বারা প্রভাবিত। নেতারা যা বলে শ্রমিকরা তাই শোনে। তাদেরকে বলা হয়, সড়কে যা কিছু হোক না কেন আমরা আছি। সেটা ন্যায় হোক, অন্যায় হোক,যা কিছু হোক,” বলছিলেন মি: কাঞ্চন।
“এটা শ্রমিকরা ঠিক এককভাবে করে নাই। শ্রমিক-মালিক সংগঠনের নেতৃত্ব যারা দিচ্ছে তারাই এ বিষয়টা করেছে।”
তবে শ্রমিক নেতা মি: ইসলাম দাবি করেন, ইলিয়াস কাঞ্চন তাদের প্রতিপক্ষ নয়।
“লাখ-লাখ শ্রমিকের ভেতরে উত্তেজনা হইতেই পারে। শ্রমিকের ব্যাপারটা কন্ট্রোল করা অনেক কষ্ট,” বলছিলেন শ্রমিক নেতা মি: ইসলাম।
মি: কাঞ্চন প্রশ্ন তোলেন, “এই মালিক সমিতির নামে শ্রমিক সমিতির নামে যে কোটি-কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে, সে চাঁদা কোন উন্নয়নের কাজে লাগে? ”
তিনি অভিযোগ করেন, মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকদের উন্নয়ন চায় না। কারণ শ্রমিকরা যদি যথাযথ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে কাজ করে তাহলে তার কাছ থেকে সংগঠনগুলো কোন চাঁদা নিতে পারবে না।
মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি করেছে গত কয়েকদিনের ‘কর্মবিরতি’র সাথে সংগঠনের কোন সম্পর্ক নেই। শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মবিরতি পালন করেছে বলে তাদের দাবি।
ইলিয়াস কাঞ্চন প্রশ্ন তোলেন, মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর নির্দেশে যদি আন্দোলন না হয়ে থাকে, তাহলে তাদের নির্দেশে আন্দোলন প্রত্যাহার হয় কিভাবে?
বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে শ্রমিকরা।
সে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী নতুন সড়ক পরিবহন আইন খতিয়ে দেখার জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে।
ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, আইনের কোন বিষয় নিয়ে ছাড় দেয়া ঠিক হবেনা।
“এবার যদি আমরা হেরে যাই, তাহলে হেরে যাবে পুরো বাংলাদেশ,” বলছিলেন মি: কাঞ্চন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-