বাঁকখালী নদী ৫০০ প্রভাবশালীর দখলে

রাসেল চৌধুরী •
কক্সবাজারে প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে বাঁকখালী নদীর ভরাট অংশ। বিশেষ করে শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর ভরাট অংশ দখল করে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করে সংকট সৃষ্টি করেছে প্রভাবশালীরা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, সদর ভূমি অফিস ও নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ’র করা প্রায় ৫০০ জন দখলদারের পৃথক তালিকায় রয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নাম। পরিবেশ অধিদপ্তর ও এসিল্যান্ড অফিস বারবার চেষ্টা করেও দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপরন্তু প্রভাবশালী দখলদাররা রয়েছে বহাল তবিয়তে।

জানা যায়, মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি রপ্তানি সহজ করতে ২০১০ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি বাঁকখালী নৌবন্দর স্থাপনে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কস্তুরাঘাট থেকে মহেশখালী চ্যানেল পর্যন্ত নদীর দুইপাড়ের ১ হাজার ২০০ একর জায়গাজুড়ে এ নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে কক্সবাজারের সদর উপজেলা অংশে ৮২১ একর এবং মহেশখালী উপজেলা অংশে ৪৪৭ একর জমি রয়েছে।

তবে সবটুকুই সরকারি খাসজমি। নৌবন্দরের জমি হস্তান্তরের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে একাধিকবার চিঠিও দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে এখন পর্যন্ত এ জমি বিআইডব্লিউটিএকে হস্তান্তর না করায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নৌবন্দর নির্মাণের কাজ।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ, সদর ভূমি অফিস ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের করা প্রায় ৫০০ জনের প্রভাবশালী দখলদারের তালিকায় রয়েছেন।

স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। এসব ব্যক্তিদের বাঁকখালী নদীর উভয় পাশের জমিতে অবৈধ দখলদার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছেন ইকবাল হাজি। তিনি অবৈধভাবে নদীবন্দরের জমিতে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন।

অপরদিকে ভূমি অফিসের তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে আব্দুল খালেকের নাম। এছাড়া পৌরসভা ঘাট এলাকার রশিদ আহম্মদ, নুরুল হুদা মিয়া, একরাম মিয়া, কবির বহদ্দার, আবদুর রহিম, জহির আহম্মদ, ছৈয়দ আলম, মফিজুর রহমান, মাঝিরঘাট এলাকার নুর মোহাম্মদ, ছৈয়দ আলম, আবুল হোসেন, হেলাল উদ্দিন, আবদুল্লাহ, ফরিদ আলম, সাইফুল ইসলাম বাচ্চু, নুরুল হক, জাহাঙ্গীর কাশেম, ডাবলো, ডুবাই বুরি, মোহাম্মদ শফি, মোস্তাফিজুর রহমান, সবুজ সওদাগর, পেশকারপাড়ার সোহেল রানা, আবুল কাশেম, নাছির উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আবুল কালাম, মোহাম্মদ ওসমান, জালাল আহম্মদ, আবদুল্লাহ খান, আবদুর রহিম, জহির আহম্মদ, ছৈয়দ আলম, মফিজুর রহমান, সামসুন্নাহার, বানু, নুরু মোহাম্মদ, ছৈয়দ মাঝি, মাঝিরঘাট এলাকার নুরুল হক, ফরহাদ, রুজিনা আনকিজ, নান্নু, মো. মফিজ, আবু ছৈয়দ, তানভীর কাশেম, আবুল হোসেন, একে মনজুরুল হক, বিবিমহর, নুর মোহাম্মদ, মোস্তফা কামাল, নজির আহম্মদ, আতিকুর রহমান, নাছির উদ্দিন, খোশেদ আলম, আবদুল হামিদ, ফরিদ আলম, নুনিয়াছড়ার কামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ মনির, নুরুল হুদা, সামশুল হুদা, উত্তর নুনিয়াছড়ার মোহাম্মদ এনাম, আমান উল্লাহ, নুরুল আমিন, রেজাউল করিম, আবদুর রহি, ছৈয়দ হোসেন, মোহাম্মদ শফিক, আনু সওদাগর, মাস্টার জাফর, আবু তালেব, ছৈয়দ করিম, ওসমান সরওয়ার, কুলছুম, আবুল আহম্মদ, শাহজাহান, মন্নান মিয়া, সফর মল্লুক, জয়নাল আবেদীন, সোনা মিয়া, জয়নাল কোম্পানি, কালা মিয়া, শহিদ উল্লাহ প্রমুখ।

এছাড়া ৬নং ঘাট এলাকার মো. ভুট্টু, আহমদ করিম, মো. রেজাউল করিম, মো. সেলিম, আবদুস সালাম, নতুন বাহারছড়া ৬নং ঘাট এলাকায় হালিমা খাতুন, মো. সিদ্দিক, শামসুল আলম, কাউসার, একে রাশেদ হোসাইন, শওকত আলী, আবদুস সালাম, মহেশখালী পৌরসভা এলাকায় রশিদ মিয়া প্রমুখ। এছাড়া আমিরুল ইসলামের রয়েছে অ্যাকোয়া কালার লিমিটেড নামে ১টি প্রতিষ্ঠান। সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির রয়েছে মিডওয়ে নামে ১টি মাছের হ্যাচারি। সাগর কোল্ড স্টোরসহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন একাধিক দখলদার।

এর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী সি-পোর্ট, নুরুল ইসলাম পাটোয়ারীর মালিকানাধীন মেরিন ফিশ প্রসেসিং লিমিটেড এবং মো. সেলিম উল্লাহর ১০ একর জায়গার ওপর কাঁকড়ার প্রজেক্ট। তালিকার বাইরেও বাঁকখালী নদী ঘিরে শত শত দখলদার রয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও ভূমি অফিস। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে সংকটে পড়বে বাঁকখালী নদী।

দখলদার হিসেবে অভিযুক্তরা প্রায় প্রত্যেকেই দখল করা জমিকে নিজেদের ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে দাবি করেছেন। দখলদার হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত আব্দুল খালেক জানিয়েছেন, যে জমিতে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হয়েছে, এটি দখল করা নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে ১টি মামলাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, নদী দখলদারের তালিকায় অনেক প্রভাবশালীর নাম আছে। সরেজমিন বাঁকখালী নদীর বর্তমান অবস্থা দেখে আমি রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি। তিনি বলেন, বাঁকখালী রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে হাইড্রোলজিক্যাল ম্যাপ অনুসরণ করে। ইতিমধ্যে বিএস জরিপ অনুসারে জেলা প্রশাসন যে ৪২০ জন দখলদারের তালিকা করেছে, তাদের দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে।

আরও খবর