কক্সবাজারে বাদ যাচ্ছে অধিকাংশ স্কুলের সভাপতি ও সদস্য

দীপক শর্মা দীপু •


সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির পুরনো নীতিমালা বাতিল করে সংশোধীত নীতিমালায় এই নতুন বিধানটি সংযোজন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার (১১ নভেম্বর) এই প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করে। প্রজ্ঞাপনে ৬ নভেম্বর সই করা হয়েছে।

এতে করে কক্সবাজার জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বাদ যাচ্ছে । কারন সব স্কুলে শিক্ষকতা যোগ্যতাই কাউকে সভাপতি করা হয়নি। বেশিরভাগ স্কুলে সভাপতি হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। তবে কিছু স্কুলে সামাজিক ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সভাপতি করা হয়েছে। তাই রাজনৈতিক পরিচয়ে যারা সভাপতি হয়েছেন তাদের বেশিরভাগ স্নাতক পাস নয়।

আবার এমনো আছে অনেক স্কুলের আশে পাশে এলাকায় স্নাতকপাস ব্যক্তি নেই। এতে অনেক স্বুলে সভাপতি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। একই ভাবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা বাদ যাচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক যোগ্যতা হিসেবে সভাপতি প্রার্থীর সন্তানকে অবশ্যই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে। এছাড়া বিদ্যোৎসাহী সদস্যদেরও সন্তান বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী হতে হবে এবং তাদেরও শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম এসএসসি হতে হবে। কমিটির সভাপতিকে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। ১১ সদস্যের কমিটিতে সদস্য-সচিব থাকবেন প্রধান শিক্ষক।

এদিকে জানা যায়, এই প্রজ্ঞাপনের কারনে কক্সবাজারে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি তাদের সভাপতির পদ হারাতে যাচ্ছেন। কারন বেশিরভাগ স্কুলের সভাপতি স্নাতক পাস নয়। শুধু তাই নয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা তাদের পদ হারাবেন। যারা এস এস সি পাস নয় এবং উক্ত স্কুলে তাদের সন্তানরা পড়ালেখা করেনা তারাও বাদ যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পিটিআই এর সাবেক সুপার শিক্ষাবিদ মো: নাসির উদ্দিন জানান, সরকার দেরিতে হলেও ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্কুলে লেখাপড়ার মান যাচাইয়ের জন্য শিক্ষিত সভাপতি ও সদস্য দরকার। তা না হলে শিক্ষার উন্নয়ন পিছিয়ে থাকবে। এখন নিশ্চিত বলা যাবে শিক্ষিত ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষার মান উন্নয়নে ভালো ভূমিকা রাখবে।

এদিকে গত মে মাসে বেসরকারি হাইস্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্য নির্বাচনে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিতর্ক হয়েছে। কমিটির একটি অংশ চাচ্ছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা উচিত।

অন্যদিকে, আরেকটি অংশ চাচ্ছেন, যেখানে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে শিক্ষা যোগ্যতা লাগে না সেখানে পর্ষদের সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের প্রয়োজন নেই। গত ২১ মে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য এম এ মতিন বলেন, “কমিটিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন। আমি এর সমর্থনে ছিলাম। কোনো চূড়ান্ত সুপারিশ আসেনি। নীতিমালা একটা হওয়া দরকার। সেটার জন্য সবার মতামতও নেওয়া হবে।”
“অংশীজনদের সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। শুধু আমরা আলোচনা করলে হবে না।”

সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বিষয়টি উপস্থাপনের পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এর বিপক্ষে অবস্থান নেন। তাদের যুক্তি একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা ওঠে না সেখানে এই পদে কেন এই প্রশ্ন আসবে? পরে কমিটির অন্য সদস্যরা এ বিষয়ে নিজেদের মতামত দেন।

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে আদালতের রায়ে স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদে অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে স্থানীয় এমপির সভাপতি পদে মনোনীত হওয়ার বিধান বাতিল হয়।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক সংক্রান্ত সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও বিদ্যেৎসাহী ব্যক্তিদের মনোনীত করতে কমিটি সুপারিশ করে।

সংসদীয় কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মহিবুল হাসান চৌধুরী, আব্দুল কুদ্দুস, এ কে এম শাহাজাহান কামাল, এম এ মতিন এবং গোলাম কিবরিয়া টিপু বৈঠকে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, স্নাতক (পাস) ও অনার্স-মাস্টার্স কলেজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হবার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস নির্ধারণ করা আছে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। তবে বেসরকারি স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ বা মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বা অন্য সদস্য হতে কোনো ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত নেই।

আরও খবর