ওমর ফারুক চৌধুরী যেভাবে হারিয়ে গেলেন

 


অনলাইন ডেস্ক • ওমর ফারুক চৌধুরীর বাড়িতে সুনসান নীরবতা। ধানমণ্ডির এই বাড়ির সামনের রাস্তাও ফাঁকা। দুই পাশে থাকা চায়ের দোকানগুলোতেও নেই আগের মতো ভিড়। নিরাপত্তা রক্ষাীরাও এখন অনেকটা ঝামেলামুক্ত। লোকজনের আনাগোনা না থাকায় তেমন ব্যস্ততা নেই তাদের। আগে নিয়মিত নানা ঝামেলা পোহাতে হতো নিরাপত্তা রক্ষীদের। অনেক সময় মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকতো।

বাড়ির পার্কিংয়ের জায়গায় বাড়তি চেয়ারের ব্যবস্থা করতে হতো।

তবে বাড়িটি ঘিরে এখন নেই কোন ধরনের কোলাহল। যাকে কেন্দ্র করে এসব হতো তিনি আছেন কিন্তু তার সাক্ষাৎ প্রার্থীরা নেই। তাই নিচতলা থেকে তিন তলার ইন্টারকমটা এখন ব্যবহার হয় না বললেই চলে। এই বাড়িতেই এখন অনেকটা নীরবে, নিভৃতে আর একাকীত্বের সঙ্গে বসবাস করছেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। বাইরে বের হন না বললেই চলে। নিয়মিত যেসব আত্মীয়-স্বজন আসতেন তাদেরও এখন দেখা যায় না খুব একটা। বন্ধু হিসেবে পরিচিত কয়েকজন আসতেন রাতে আড্ডা দিতে। গল্প করতে। তাদেরও আর দেখা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে বাড়িটি ঘিরে এতদিনের কোলাহল হঠাৎ করেই মিইয়ে গেছে। নিরাপত্তা রক্ষীরা জানান, স্যার অনেকদিন হলো বাড়ির বাইরে যান না।

মাঝে কয়েক দিন বের হয়েছেন তবে বেশি সময়ের জন্য নয়। টানা কয়েকদিন টেলিফোনে না পেয়ে সাবেক এই যুবলীগ চেয়ারম্যানের বাসায় গেলে নিরাপত্তা রক্ষী ইন্টারকমে যোগাযোগ করেন। অপর প্রান্ত থেকে পরিচয় জানার পর বলা হয় উনি বাসার বাইরে আছেন। ফিরতে দেরি হবে। পরদিন আবারও বাসায় গেলে একই তথ্য জানানো হয়। নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, স্যার এখন কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। দু’একজন দেখা করতে এলেও তাদের বাসার নিচ থেকে বিদায় নিতে হয়। ঢাকা মহানগর যুবলীগের কয়েকজন নেতা জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিষয় নয় কুশল বিনিময়ের জন্য ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন না। চলমান শুদ্ধি অভিযানের পর থেকে আলোচনায় আসেন ওমর ফারুক চৌধুরী। ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের কাছ থেকে ক্যাসিনোর ভাগ পেতেন বলে অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তার ক্যাসিনো-সম্পৃক্ততায় নড়েচড়ে বসেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অনেক নেতা। এছাড়া ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাজারও অভিযোগ জমে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলীয় পদ বাণিজ্যের অভিযোগ, স্বেচ্ছাচারিতা, ইচ্ছামাফিক পদ দেয়া-পদ বাতিল করা ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ছিল তার নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।

এসব কাণ্ডে ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ বিষয়ে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়। নেয়া হয় বাড়তি সতর্কতা। ব্যাংক হিসাব তলবের পর নিজেকে গুটিয়ে নেন ওমর ফারুক চৌধুরী। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর উত্তরায় যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল তাকে। এর পর থেকে তার দেখা পাননি নেতাকর্মীরা। তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ বিক্রির মাধ্যমে ওমর ফারুক চৌধুরীর পেশাগত জীবন শুরু হয়। বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির রাজনীতি করে আসা ওমর ফারুক ২০০৯ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। ২০১২ সালে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। নিজেকে তরুণ ভাবাপন্ন ৭১ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একক ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। এরপরই যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

আরও খবর