ডেস্ক রিপোর্ট • দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পিছনে রয়েছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজি। মিয়ানমার থেকে যেই পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ৪২ টাকায়, ভোক্তা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে।
অভিযোগ দামের এই কারসাজিতে জড়িত আমাদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আড়তদাররা।
ভারত গত ২৮ অক্টোবর থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। রপ্তানি বন্ধের আগের দিনও বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিলো ৮০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতীয় পেঁয়াজ আসা বন্ধ থাকলেও দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। পেঁয়াজ আসছে মিয়ানমার থেকেও৷ তারপরও দাম বেড়ে গেছে দ্বিগুণ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই দর বৃদ্ধির পিছনে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমাদানিকারক ১২ জনের একটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছে। তারা কক্সবাজারের টেকনাফভিত্তিক আমদানিকারক। চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম খাতুনগঞ্জে অভিযান চালাতে গিয়ে এই সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করেন। তিনি জানান, ‘‘আমরা কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি আমদানিকারকেরা এখন মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করে৷ কিন্তু আড়তদারদের মাধ্যমে তারা প্রতি কেজি পাইকারিতে ১১০ টাকায় বিক্রি করে৷’’ আর খুচরা পর্যায়ে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৫০ টাকা কেজিতে।
ভারত থেকে এখন যে সামান্য পেঁয়াজ আসছে তা পুরনো এলসির। এ পর্যন্ত এক হাজার ৫০ টন পুরনো এলসির পেঁয়াজ এসেছে প্রতি টন আগের ৮৫০ মার্কিন ডলার দামে৷ যা কেজিতে পড়ে ৬০ টাকা করে।
এখন প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আসছে মিয়ানমার থেকে৷ তৌহিদুল ইসলাম জানান, ‘‘আমাদের হিসাবে রোববার মিয়ানমার থেকে ৬০ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে৷ প্রতি ট্রাকে ২০ টন হিসাবে তা এক হাজার ২০০ টন।’’
রোববার খাতুনগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশ কয়েকজন আড়তদারকে (কমিশন এজেন্ট) জরিমানা করে। সোমবার সেখানকার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকায় নেমে আসে, যা আগের দিনও ছিলো ১১০ টাকা কেজি। তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা মনে করি আমদানির পর পরিবহন এবং অন্যান্য খরচ ধরে পাইকারি বাজারে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকার বেশি হতে পারে না। তাই আমরা মিয়ানমারের পোঁয়াজের পাইকারি বিক্রি কেজিতে ৫০ টাকার মধ্যে রাখতে বলেছি।’’
খাতুনগঞ্জের আড়তদার আবুল বাশার দাবি করেন পেঁয়াজের পাইকারি দামে তাদের কোনো হাত নেই। এটা যারা আমদানি করেন তারাই ঠিক করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেজিতে প্রতি ৫০-৬০ পয়সা কমিশন পাই৷ আমদানিকারকরা আমাদের বাজার দেখে যে দাম বলে সেই দামে আমরা বিক্রি করি। পেঁয়াজের আমদানি মূল্যের ওপর আমাদের ধারণা নাই, আমরা কমিশন পাই মাত্র।’’
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সোমবার পেঁয়াজের কেজি পাইকারিতে ৭০ টাকা হলেও ঢাকার শ্যামবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকাতে। শ্যামবাজারের আড়তদার আব্দুল মাজেদ জানান, ‘‘এখন বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজই আছে। ভারতীয় কোনো পেঁয়াজ নাই৷’’ ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে পাইকারি দামে এত পার্থক্য কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেটা যারা আমদানি করে তারা বলতে পারবেন৷ আমরা কমিশন পাই।’’
মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিএন্ডএফ এজেন্ট টেকনাফের শওকত আলম দাবি করেন, ‘‘মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির দুইটি হিসাব আছে। অফিসিয়াল রেট প্রতি টন ৫০০ ডলার, কিন্তু এখন আমাদের কিনতে হচ্ছে ৮০০ ডলারে। এখানে এলসি খুলতে হয় না। নগদ টাকা নিয়ে যাই, পেঁয়াজ নিয়ে আসি৷ আমাদের এখন প্রতি কেজি কিনতে প্রায় ৮০ টাকা খরচ হয়। তাই কোজিতে ১০-১৫ টাকাতো ব্যবসা করবই৷’’ তবে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারে এক খাতা (স্থানীয় মাপ) পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা। এক খাতায় দেড় কেজি। সেই হিসাবে এক কেজির দাম ৬০ টাকা।’’
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই সিন্ডিকেটে আমদানিকারকের সঙ্গে কমিশন এজেন্ট এবং টেকনাফের কিছু সিএন্ডএফ এজেন্টও জড়িত। তারা নানা কাহিনী তৈরি করছে৷ মিয়ানমারে ৪২ টাকার ওপরে পেঁয়াজ নেই।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১২ জনের তালিকা পাঠিয়েছি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও একটি টিম ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে মনিটর করার জন্য।’’
ওই ১২ জনের একজন টেকনাফের মোহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে জহির দাবি করেন, তিনি এবার মিয়ানমার থেকে বেশি পেঁয়াজ আনেননি। আটশ বস্তা ( প্রতি বস্তায় ৪০ কেজি) পেঁয়াজ এনেছেন৷ বড় ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি এনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘৪২ টাকা কেজি বলা হলেও ৪২ টাকায় আনা যায় না। পেঁয়াজ পচে যায়, ওজন কমে যায়। আরো অনেক ধরনের খরচ আছে৷ তাই আমরা দাম বেশি নেই।’’
তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘মিয়ানমারের কিছু বড় ব্যবসায়ী কক্সবাজারেও ব্যবসা করে। তারা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের ব্যবসা করছে৷ আমরা এসব করি না।’’
সূত্র : ডয়েচে ভেলে
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-