কড়াকড়িতে মাদকের কৌশল বদলে উখিয়ার ফার্মেসীগুলোতে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট বিক্রি!

সরওয়ার আলম শাহীন •

উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে গড়ে উঠা ফার্মেসি গুলোতে বিক্রি হচ্ছে ঘুমের ট্যাবলেট ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মাদক জাতীয় ট্যাবলেট। যা সেসব করে অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে অনেক কিশোর বালক। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব ফার্মেসীতে বখাটে যুবকদের ভীড় থাকে চোখে পড়ার মত। উখিয়া সদর, কোটবাজার, মরিচ্যা, সোনারপাড়া, কুতুপালং, বালুখালী, থাইনখালী, পালংখালীর বাজারগুলো অনুমোদনহীন এসব মাদক বিক্রি হচ্ছে হলেও দেখার কেউ নেই। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ফার্মেসী গুলোতে এ প্রবনতা বেশী। ফলে রোহিঙ্গারা জড়াচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে,পাশাপাশি স্থানীয় বখাটে যুবকরা চুরি, ডাকাতি, চিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।

উপরে উল্লেখিত বাজারে গড়ে উঠা ফার্মেসী গুলোতে চলছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ঔষধ বিক্রির রমরমা ব্যবসা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ঔষধ বিক্রির অন্তরালে নেশাজাতীয় ইনজেকশন ও ঘুমের ট্যাবলেট বিক্রয় করছে অধিক মুনাফা লাভের আশায়।ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজার পাশাপাশি এবার নেশার রাজ্যে যুক্ত হয়েছে ঘুমের ট্যাবলেট। বিভিন্ন ধরণের ঘুমের ট্যাবলেট মাদক সেবীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নেশার ক্ষেত্রে।

আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনার পর থেকে মাদক সেবীরা মাদকের বিকল্প হিসেবে ঝুঁকে পড়েছে বিভিন্ন কোম্পানীর ঘুমের ট্যাবলেটের উপরে। হাত বাড়ালেই ঔষুধের ফার্মেসী গুলোতে অনায়াসে মিলছে ঘুমের ট্যাবলেট। উখিয়ার সদর ষ্টেশন গুলো ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনাচে কানাচে লাইসেন্সবিহীন এবং লাইসেন্সধারী ফার্মেসীতে বিক্রি হচ্ছে ঘুমের ট্যাবলেট। সরকারী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দেশের নামী দামী বিভিন্ন কোম্পানীর ঘুমের ট্যাবলেট বিক্রয় করছে ফার্মেসীগুলোতে।

যদিও সরকারি নীতিমালায় ঘুমের ঔষধ বিক্রির ক্ষেত্রে, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন। কিন্তু উখিয়ার ফার্মেসী গুলোতে ঘুমের ঔষধ বিক্রি হচ্ছে ডা. এর ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই। যার ফলে মাদকসেবীরা খুব সহজেই মাদকের পরিবর্তে ঘুমের ট্যাবলেটকে নতুন মাদকরুপে সেবন করছে। ঘুমের ট্যাবলেটের মধ্যে রয়েছে সিরামিন সিরাপ ইবনেসিনা কোম্পানী, স্কয়ার লাইজন এএমজি, সেডিল ২০ পিস ৫এমজি, ট্রাইপট্রিন ১০/২৫এমপি, ডরমিটল ৭.৫/১৫ এমজি, রেডিএন্ট কোম্পানীর এবং ল্যাগজুটেনিল ৩এমজি, অরিউন কোম্পানীর গোফাম ৩ এমজি, সেনডোজ কোম্পানীর এক্সিউনিল ৩এমজি, অপসোনিন কোম্পানীর ইজিয়াম ৫এমজি পেইস ২এমজি, ইনসেপটা কোম্পানীর হাইফনোফাস্ট ১৫এমজি, ডিসোপান ২এমজি, ক্লোসান ২এমজি, এসকেএফ কোম্পানীর মিলাম ১৫এমজি এই সব ওষুধের সাথে মেশানো হচ্ছে ব্যথানাশক ঔষধ এসকেএফ এর টাপেন্টা, স্কয়ারের পেন্টাডল কাশির সিরাপ ফেনারগান সহ কয়েকটি সিরাপ।

এগুলো এখন উঠতি বয়স্ক তরুন-তরুনীদের মাঝে আকর্ষনীয় আসক্তির বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে উখিয়ার ফার্মেসীগুলোর সামনে উঠতি বয়স্ক তরুনদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এইসব ঘুমের ঔষধ গুরুতর অসুস্থ্য, দুর্ঘটনার আহত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ লোকজনের ঘুমের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা হয়। আর ব্যথানাশক ঔষধ টাপেন্টা তীব্র ব্যথা হলে ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকে বলে ডাক্তারদের কাছ থেকে জানা যায়। ফেনারগান সিরাপ ঠান্ডা জনিত কারণে ব্যবস্থা পত্রে লিখে থাকে।

এইসব ঔষধ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও অতি মুনাফার আশায় বিক্রি করছে উখিয়ার অসাধু ঔষধ ব্যবসায়ীরা। আর সুযোগ নিচ্ছে মাদকসেবীরা। বিপথগামী স্কুল পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া তরুণ সমাজ আজ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে মাদকরুপী ঘুমের ঔষধের কারনে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসি গুলোতে এমন অবাধ উত্তেজক ট্যাবলেট ও সিরাপ বিক্রি হওয়ায় সচেতন মহল ও অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সচেতন মহলের দাবী ফার্মেসি গুলোতে ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ঔষধ নীতিমালার আওতায় আনার যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক ।

এ ব্যাপারে উখিয়া স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ জাতীয় ঔষধ গুলো অধিক মাত্রায় সেবন করলে কিডনি ও লিভারের সমস্যা হয়। এই ওষুধগুলো প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রয় করা নিষিদ্ধ থাকলেও কিছু ফার্মেসি মালিক অধিক মুনাফার লোভে এই ওষুধগুলো বিক্রয় করে থাকে। আর এসব ওষুধ খেয়েই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে উঠতি বয়সী যুবকেরা। এ নিয়ে আলোচনা করে অচিরেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর