আবদুল্লাহ আল আজিজ •
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে বসতি ও পানের বরজ স্থাপনের জন্য অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। ইতোমধ্যে পাহাড় কেটে সংরক্ষিত বনে অবৈধ বসতি ও পানের বরজ তৈরি হলেও তা উচ্ছেদ করার ব্যাপারে বনবিভাগ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে সংরক্ষিত বনের ভিতরে অবৈধভাবে পানের বরজ ও বসতি স্থাপনের জন্য পাহাড় কাটায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত বনের ভিতরে পাহাড়ের ঢালু ও চওড়ায় অবৈধভাবে বসতি ও পানের বরজ স্থাপন তৈরি করেছে স্থানীয়রা। আর এসব পানের বরজ ও বসতি স্থাপন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতায় বনদস্যু আর ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের শিকার সংরক্ষিত বনের গাছ ও সুউচ্চ পাহাড়।
জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার ইনানী রেঞ্জের আওতাধীন ইনানী শফির বিল এলাকায় প্রতি বছর শুকনো মৌসুম এলেই নির্বিচারে চলে পাহাড়কাটা। আর বর্ষা মৌসুমে ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা। একটি চক্র প্রতিদিন ওই এলাকায় পাহাড় কাটছে আর ডেম্পার, ট্রলি এবং ঠেলাগাড়ি দিয়ে পরিবহন করছে পাহাড়কাটা মাটি। এভাবে পাহাড়কাটার কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে পাহাড় ও বনাঞ্চলের আয়তন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ইনানী রেঞ্জের আওতাধীন শফিরবিল এলাকায় সরকারি বনভূমি এবং পাহাড় কর্তন করে তৈরি হচ্ছে বসতি ও পানের বরজ। নিয়মিত পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও তা দেখার কেউ নেই।
উপজেলা প্রশাসনের কড়াকড়ি আরোপ থাকার পরেও একটি প্রভাবশালী চক্র পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসতঘর ও পানের বরজ তৈরী করছে বর্ণিত মাটি খেকো সিন্ডিকেট ইনানী শফির বিল এলাকার মৃত রজক আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে মোঃ আলম, ফরিদ আলম, ও তার মেয়ে জামাই ভেলা মিয়া। তারা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা শ্রমিক এনে পাহাড়ের মাটি কেটে বসত বাড়ি ও পানের বরজ তৈরি করে নিজেদের ফায়দা লুটছে। আর মাটি পাচার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে সরকারি বনভূমি হতে পাহাড় কর্তন ও মাটি সরবরাহ নিষিদ্ধ থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেট সদস্যরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক পাহাড় কর্তন করেই যাচ্ছে। বর্তমানে এমন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বন বিভাগ নামের কোন ডিপার্টমেন্ট নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, স্থানীয় এ প্রভাবশালীদের নেতৃত্বেই প্রতিদিন এ চক্রটি রোহিঙ্গা শ্রমিক এনে পাহাড় কেটে মাটি করে সমান করছে আর তৈরি করছে বসত বাড়ি ও পানের বরজ। তারা সংশ্নিষ্ট প্রশাসনকে ও স্থানীয় হ্যাডমেন মনির আহমেদকে ম্যানেজ করেই চালান এই অপরাধকর্ম। পাহাড় কর্তন ও মাটি পাচারে বাধা দিলে উল্টো তাদেরকে হুমকিসহ মারধর করা হয়। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে কেউই এই ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে চান না। বর্তমানে ইনানী শফির বিলে পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে। প্রকাশ্যে অবৈধ পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখলেও বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে অনেকের অভিমত।
সচেতন মহল মনে করেন, যারা মাটির ঠিকা রাখে, তারাই প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে বসত ঘর ও পানের বরজ করে ও মাটি পরিবহন করছে। তাদের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় পাহাড় কাটতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অভিযান চালালে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেনের (০১৭১৮০০৩৯৮৪) এই নাম্বারে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সরকারি পাহাড় গুলো সুরক্ষা করতে অবিলম্বে পাহাড় কর্তন এবং মাটি পাচার বন্ধের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-