পরিবর্তনের চমক আওয়ামী লীগে


ডেস্ক রিপোর্ট • আসন্ন কাউন্সিলে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে আওয়ামী লীগ। এর আগে পরিবর্তনের ঢেউ আসবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় রদবদল হবে চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজাবেন ‘নতুন মেজাজে’। নেতৃত্বে ক্লিন ইমেজ ফিরিয়ে আনার মূল টার্গেটে আওয়ামী লীগ। তবে শুরুটা হবে তার আগেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের কাউন্সিলেই প্রথম বয়ে যাবে পরিবর্তনের হাওয়া।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে আসার পর দুঃসময়ে যারা ছাত্রলীগের হাল ধরেছিলেন এবার দলের প্রেসিডিয়াম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তাদেরই মূল্যায়ন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আন্তরিক ভূমিকায়। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। অধিকাংশ পদে ঠাঁই পাবেন অপেক্ষাকৃত তরুণ ও নিষ্কলুষ ভাবচ্ছবির ধারকরা। প্রেসিডিয়ামে থাকা প্রবীণদের প্রায় সবারই ঠাঁই হচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদে। অন্যবারের তুলনায় এবার উপদেষ্টা পরিষদ হচ্ছে অনেক বেশি ‘শক্তিশালী’ ও ‘কার্যকর’। দলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত হবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে।

দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবার উপদেষ্টা পরিষদকেও আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেভাবেই তিনি সাজাতে চান উপদেষ্টা পরিষদের কাঠামো। দলে বিতর্কিতদের ঠাঁই হচ্ছে না কোথাও। উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রেসিডিয়ামের পাশাপাশি যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেও থাকবে ‘বিশেষ চমক’।

এদিকে মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ দুই সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ঘিরে সারা দেশেই এখন নেতা-কর্মীদের মাঝে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। দলীয় কার্যালয়গুলোয় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কার্যালয়গুলোয় সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর উপচে পড়া ভিড়। নেতৃত্বে আসার দৌড় প্রতিযোগিতায় বদলে গেছে তৃণমূলের চিত্রও। চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে কমিটির ভবিষ্যৎ ও নেতৃত্বের কাঠামো নিয়ে। বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্নে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানে আশা জাগিয়েছে ‘ত্যাগী’ ও ‘পরীক্ষিত’ নেতাদের মনে। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাউন্সিল। ২৩ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগরী উত্তরের বর্ধিত সভা ও ২৪ অক্টোবর দক্ষিণের বর্ধিত সভা। এই বর্ধিত সভায় চূড়ান্ত হবে উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলনের দিনক্ষণ। এ ছাড়া ২৩ নভেম্বর হবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল।

এদিকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল নিয়ে। এরই মধ্যে নির্মল রঞ্জন গুহকে আহ্বায়ক ও গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চুকে সদস্যসচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মকা অব্যাহত রেখেছে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি। সংগঠনের শীর্ষ পদে কারা আসছেন, তা নিয়ে চলছে দেশব্যাপী নেতা-কর্মীর মধ্যে জোর আলোচনা।

দলীয় সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, শীর্ষ নেতৃত্বে আসার আলোচনায় রয়েছেন নির্মল রঞ্জন গুহ, গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, সাজ্জাদ সাবিক বাদশাহ, শেখ সোহেল রানা টিপু, খায়রুল হাসান জুয়েল, গোলাম সারোয়ার মামুন, আবদুল আলিম প্রমুখ। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের কেউ কেউ উঠে আসতে পারেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে।

জানা গেছে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও ব্যাপক পরিবর্তন হবে। রদবদল ঘটবে শীর্ষ পদেও। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এমনই আভাস দিয়েছেন। আগামীকাল রবিবার বিকাল ৫টায় গণভবনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর থাকার অনুমতি এখনো মেলেনি। ওই বৈঠকে কাউন্সিলের দিকনির্দেশনাসহ ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। নগরীর এ দুই কমিটিতেও নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে টানটান উত্তেজনা যুবলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে।

যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে থাকবে বড় ধরনের চমক। সাধারণ সম্পাদক পদেও হবে তা-ই। শুধ্ এ দুটি পদই নয়, গুরুত্বপূর্ণ সব পদে পরিবর্তন আসবে। ঢেলে সাজানো হবে প্রেসিডিয়াম। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে। নিষ্কলুষ ভাবচ্ছবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাই থাকবেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিতর্কিতরা ইতিমধ্যেই ছিটকে পড়েছেন দৌড় থেকে।

জানা যায়, নেতৃত্ব নির্বাচনে বয়সসীমাও বেঁধে দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামীকাল যুবলীগের বৈঠকে। সে ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব-৪৫ বছরের মধ্যেই বয়সসীমা রাখা হতে পারে বলে আলোচনা হচ্ছে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে। বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া হলে নেতৃত্বের কাঠামো হবে এক ধরনের। বয়সসীমা না থাকলে সে ক্ষেত্রে হতে পারে অন্যরকম। যুবলীগের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ ও পারিবারিক ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’কেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। উড়ে এসে জুড়ে বসাদের ঠাঁই হবে না। এবার নেতৃত্বে ঠাঁই পাবে না ‘বিতর্কিত’ ও ‘ভাই লীগ’।

এদিকে চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের টানা ছয়বারের এমপি মির্জা আজম। তার অবশ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদপ্রাপ্তিতেই আগ্রহ। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, শেখ মণির ছেলে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও তাপসের বড় ভাই ফজলে শামস পরশ।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক একঝাঁক নেতার নাম আলোচনায় উঠে আসছে নানা সমীকরণে। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই আলোচনার কেন্দ্রে। নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, ইসহাক আলী খান পান্না, লিয়াকত শিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হাসান চৌধুরী রোটন ও এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। এ ছাড়া বর্তমান কমিটিতে থাকা মহিউদ্দিন মহী, আতাউর রহমান, সুব্রত পাল, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেনসহ অনেকেই আছেন আলোচনায়।

জাতীয় সংসদের আলোচিত দুই তারুণ্যের প্রতীক শেখ পরিবারের সন্তান শেখ হেলালের ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি ও জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপিসহ একঝাঁক মেধাবী তারুণ্যের সমন্বয় ঘটবে যুবলীগের প্রেসিডিয়ামে। ছাত্রলীগের যেসব মেধাবী মুখ যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগে ঠাঁই পাবেন না তাদের জায়গা হবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও উপকমিটিতে।

আরও খবর