উখিয়ায় তদন্তকালে ডিজিএম অবরুদ্ধ: হামলায় আহত ৪

ফারুক আহমদ, উখিয়া •

উখিয়ায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে কতিপয় চিহ্নিত দালাল চক্র কর্তৃক লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দ্বিতীয় দফা তদন্ত করতে গিয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সম্মতির ডিজিএম সরোয়ার গোলাম মোস্তফা।

গত বুধবার বিকেলে হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বড় বিল এলাকায় এ লঙ্কা কান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নতুন বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ তদন্ত কমিটির নিকট সরাসরি জবানবন্দি প্রদান কালে দালাল চক্রদের হামলার শিকার হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন বশির, আহমদ নুর মোহাম্মদ প্রকাশ ভুট্টো ও ছৈয়দ আলম।

খবর পেয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবী ও দালালদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। তখন দু’পক্ষই মারমুখী হয়ে ওঠে। সংগঠিত ঘটনার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তদন্তে যাওয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা নিরাপত্তার স্বার্থে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম জানান, তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে দু’পক্ষ মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে এমন খবর পেয়ে উভয়পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্তে যাওয়া উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সরোয়ার গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দীর্ঘ মোবাইলফোনে এ জানান দুই দফা তদন্ত কার্যক্রমে স্থানীয় দালাল চক্র নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ কথা বলে গ্রাহকদের নিকট টাকা নিয়েছে এমন কিছু প্রমাণ মিলেছে। তবে এলাকায় বিবাদমান দুটি পক্ষ একসাথে থাকায় তদন্ত কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে মারমুখী আচরণ ও উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় তদন্ত কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে আসি। খুব শীঘ্রই পুনরায় তদন্ত শুরু করা হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

ওই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া দালালদের পরোচনায় পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা গোপনে তদন্ত করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে অপচেষ্টা করছিল। এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে প্রকাশ্য কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে এমন প্রমান সহ জবানবন্দি দিতে চাইলে ডিজিএম পরে শুনবে বলে গড়িমসি শুরু করে। এতে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

স্থানীয় নুর মোহাম্মদ প্রকাশ ভুট্টো ও জামাল উদ্দিন জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রাহকদের নিকট হাতিয়ে নিয়েছে এমন সাক্ষ্য প্রমাণ দেওয়ার সময় দালাল চক্র ও তাদের বাহিনী নিরহ জনগণের উপর হামলা চালায়। স্থানীয় মেম্বার মোকতারের ইন্দনে তার লেলিয়ে দেওয়া দালান বাহিনী এ ঘটনাটি করেছে।

অপর দিকে কোন টাকা পয়সা নেয়নি বলে দাবি করে মেম্বার মোকতার জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, উধর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উখিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম সরয়ার গোলাম মুস্তাফার নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল গত রবিবার প্রথম দফায় উত্তর বড়বিল খেজুর তলা গ্রামে সরজমিন পরিদর্শনে যান।

এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম সহ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত কালে শত শত গ্রামবাসি ও ভুক্তভোগীদের উপস্থিতিতে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা নিয়েছে বলে তদন্ত টিমের সদস্যদের নিকট জবানবন্দি দেন।

জানা যায়, উপজেলার হলদিয়াপালং ৩নং ওয়ার্ডের ছায়া খোলা, রেঙ্গুরবিল, বড়ুয়াপাড়া, সাতগড়িয়া পাড়া ও তুলাতলী নামক গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে টাকা হাতিযে নিচ্ছে স্থানীয় একটি দালাল চক্রের সিন্ডিকেট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এ কর্মসূচীর আওতায় সারাদেশের ন্যায় উখিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।

প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে বিদ্যুৎ সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে গেলেও স্থানীয় কিছু চিহ্নিত দালাল চক্র এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হত দরিদ্র পরিবারের নিকট হতে হাতিযে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছে বিদ্যুৎ অফিসের লাইন সম্প্রসারণ কাজের ঠিকাদার ও ফোর ম্যান ও স্থানীয় দালালচক্র।সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে নানা অজুহাত দেখিয়ে ওই দালাল চক্র এ কাজটি করে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিমত।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ছায়া খোলা রেঙ্গুলবিল, বড়ুয়া পাড়া, সাতগড়িয়া পাড়া ও তুলাতলী ও পার্শ্ববতী এলাকায় প্রায় ৩শত ৫০ পরিবার রয়েছে। ওই গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত পরিবারে নতুন বিদ্যুৎ পৌছে দিতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় কাজ শুরু করেন। বর্তমানে বড়ুয়া পাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, দালাল চক্রের সাথে উখিয়া ও কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যাতা ও যোগসাজস রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে স্থানীয় জনগণ ইতিমধ্যে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম এর কাছে গিয়ে নতুন সংযোগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

জানা গেছে প্রথম দিন তদন্তে কালে সেহের আলী প্রকাশ পুতিয়া, মোকতার , আলী হোসেন ও জাফর আলম তদন্ত টিম কে লিখিতভাবে জবানবন্দি প্রদান করেন যে বিদ্যুৎ সংযোগ নামে নতুন গ্রাহকদের নিকট হতে আদায়কৃত টাকা স্থানীয় মেম্বার হোসেন মোহাম্মদ মুক্তার কে দেওয়া হয়েছে। এ সময় শত শত ভুক্তভোগী গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম প্রতিশ্রতি দেন যে প্রমাণিত হলেই আদায় কৃত টাকা পুণরায় জনগণকে ফেরত দেওয়া হবে।

স্থানীয় জনগন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নিরহ ব্যক্তির নিকট হতে আদায়কারী চিহ্নিত দালাল চক্রদেরকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবী জানিয়েছেন।

আরও খবর