ভারত থেকে এলো নিন্মমানের ১৬৫ ট্রাক পেঁয়াজ

ডেস্ক নিউজ:

অবশেষে এলসি’র পেঁয়াজে ছাড় দিয়েছে ভারত। শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৫৭টি ট্রাকে ৯শ’ ৪৬ মেট্রিক টন ও আজ শনিবার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে ১০৮ ট্রাকে ২২শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। তবে টানা চার দিন বা তারও বেশি সময় ধরে এসব পেঁয়াজের ট্রাক সীমান্তের ওপারে আটক থাকায় এর একটি বড় অংশই পচে নষ্ট হয়ে গেছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকরা। তবে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন পেঁয়াজ ঢোকায় উভয় স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এসব পেঁয়াজ শনিবার ৩৫ টাকা থেকে মানভেদে ৪৫ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

উভয় বন্দরের আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, হুট করে পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা এবং সে আদেশ আগের এলসির ওপরেও বহাল রাখায় বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ে। এর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মুনাফা করার অতি প্রবণতার কারণে এক লাফে ১০০ টাকা পেরিয়ে যায় পেঁয়াজের দাম। আগেই এলসি করা ও সীমান্ত বন্দরে চলে আসা পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ভারত ছাড়বে কিনা তা নিয়ে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনাও হয়। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে, পূজার ছুটির কারণেও উভয় দেশের সীমান্ত বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল চারদিন। আর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় এ সময়ের বৃষ্টিপাতও আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর প্রভাব ফেলে। অবশেষে ভারত আগে করা এলসি’র পেঁয়াজে বৃহস্পতিবার ছাড় দিলে এবং শুক্রবার এগুলো হিলিবন্দর ও শনিবার ভোমরা বন্দর দিয়ে ঢুকলেও এগুলোর মান খারাপ হয়ে যায়। আমদানির এসব পেঁয়াজের উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল নষ্ট। বাধ্য হয়ে অনেক পেঁয়াজ ফেলে দিয়েছেন আমদানিকারকরা।

হিলি প্রতিনিধি জানান, হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চারদিন বন্ধের পর শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ভারত থেকে পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বন্দর দিয়ে দু’দেশের মাঝে আমদানি রফতানি শুরু হয়। গতকাল বন্দর দিয়ে ৫৭টি ট্রাকে প্রায় ৯শ’ ৪৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে হিলি স্থলবন্দর ও পাশের পাইকারি বাজারে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ওইদিন প্রকারভেদে ৪৮ টাকা থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। তবে এতেও পুরো পেঁয়াজ বিক্রি না হওয়ায় আজ তা আরও কমে ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন, যে পরিমাণ পেঁয়াজ ভারত থেকে ঢুকেছে সে পরিমাণ ক্রেতা ছিল না। এ কারণে পেঁয়াজগুলো বন্দর থেকে খালাস করে নিজস্ব গুদামে নিয়ে এসে সেখানে বাছাই করেছেন। এর মধ্যে যেগুলো চলার মতো সেসব পেঁয়াজ বিক্রি করছেন আর যেগুলোর মান খারাপ হয়েছে সেগুলো ফেলে দিচ্ছেন।

এদিকে বন্দরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পাইকার আসতেন পেঁয়াজের মান খারাপ হওয়ার কারণে তাদেরকে পেঁয়াজ কিনতে দেখা যায়নি।

হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন আমদানিকারকদের গুদামে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকার শরিফুল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল আবারও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজের মান বেশ খারাপ হয়ে গেছে অনেক পেঁয়াজ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে পেঁয়াজের অনেক দাম কম যার কারণে পেঁয়াজ কিনতেও সুবিধা হচ্ছে। আগে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে কিনতে হতো আর এখন ৩০/৩৫ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। আর কিছু পেঁয়াজের মান ভালো সেগুলো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় গত রবিবার বিকেল থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ভারত অভ্যন্তরে ৬৫/৭০টি ট্রাকে দেড় হাজার টনের মতো পেঁয়াজ আটকা পড়ে। এ নিয়ে ভারতের দিল্লিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রফতানি বন্ধের পূর্বে হওয়া ৮৫২ মার্কিন ডলার মূল্যের পুরানো এলসিগুলোর বিপরীতে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দেয় ভারত সরকার। এর ফলে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজগুলো বাংলাদেশে আমদানি শুরু হয়। গতকাল ৫৭টি ট্রাকে ১ হাজার টনের মতো পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে, শুধু হিলি স্থলবন্দর দিয়ে নয় দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর গুলো দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এর প্রভাবে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামও কমেছে। বাংলাদেশে যত পরিমান পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে তাতে করে আগামী ৬/৭দিন যে পূজার বন্ধ রয়েছে এর মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি না হলেও বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে কোন প্রভাব পড়বে না সেই সঙ্গে দামও বাড়বে না বলে তিনি জানিয়েছেন।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ছিল এতে যেমন বিপাকে পরেছিলাম, এখন আটকে থাকা পেঁয়াজ দেশটি রফতানি করায় আরেক বিপদের মধ্যে পড়েছি। গত কয়েকদিন ধরে ট্রাকে ত্রিপল দিয়ে পেঁয়াজগুলো আটকে থাকার কারণে গরমে পেঁয়াজের মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমদানিকৃত পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অনেক পেঁয়াজের গাড়ি দিয়ে পানি ঝড়ছে, পেঁয়াজ পচে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। বন্দরে যেসব পেঁয়াজ এসেছে তার মধ্যে অনেকটাই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বন্দর থেকে এসব পেঁয়াজ নিজ গুদামে নিয়ে এসে সেগুলো বাছাই করে তারপর বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কিছু পেঁয়াজ বন্দর থেকেই বিক্রি করা হয়েছে। আবার অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে আমদানিকারকরা ফেলে দিয়েছেন।

তার দাবি, একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করায় দাম কমে গেছে। আর পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হবে অনেক আমদানি কারককে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় অপেক্ষমাণ থাকা ১০৮ ট্রাকে ২২শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

শনিবার দুপুর পৌনে ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমদানি করা পেঁয়াজবাহী ট্রাকগুলো ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করে।

এই পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর পেঁয়াজের দাম কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সাতক্ষীরার খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা কেজি দরে।

সাতক্ষীরা ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার আগে ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় দেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। সেখান থেকে ১০৮ ট্রাকে ২২০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে। এসব পেঁয়াজ ২৮ সেপ্টেম্বরের আগে এলসি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে শনিবার দুপুরে পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে। কয়েক দিন ধরে আটকে থাকা ট্রাকে ত্রিপল দিয়ে পেঁয়াজগুলো ঢেকে রাখার কারণে অনেক পেঁয়াজে পচন ধরেছে।

সাতক্ষীরা ভোমরা শুল্ক স্টেশন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দেবনাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও খবর