রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে চীন

ডেস্ক রিপোর্ট • রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হচ্ছে চীন। বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার নিয়ে গঠিত একটি ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ সরাসরি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বলে নিউ ইয়র্ক থেকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে যায়, সেজন্য চীন একটি ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি মাঠ পর্যায়ে প্রত্যাবাসনকে সহায়তার জন্য কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ তাদের সুপারিশ মন্ত্রীদের কাছে দেবে।’

উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা পর্দার আড়ালে কাজ করলেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আনুষ্ঠানিকভাবে শুধুমাত্র জাতিসংঘ কাজ করছে।

একঘণ্টার বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকটি সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত তিনটায় শুরু হয়।

রোহিঙ্গারা ফেরত না গেলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি চীনারা মানে এবং আজকে মিয়ানমারও স্বীকার করেছে। মিয়ানমার বলেছে— এটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’

মিয়ানমার সরকার খুব ধীর গতিতে চলে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘‘আমি আশাবাদী, কিন্তু একটু ‘কিন্তু’ আছে।’’

বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনারা আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে এবং মিয়ানমার এদিক-ওদিক করার চেষ্টা করেছে। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে পারেন। এছাড়া, আমরা নিজেদের উদ্যোগে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছি এবং আরও দুটি বড় ধরনের অনুষ্ঠান হবে।’

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত টিন্ট সোয়ে, পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন, জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান, জাতিসংঘ মহাসচিবের রোহিঙ্গাবিষয়ক দূত ক্রিস্টিনা বার্গেনারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করলে রোহিঙ্গারা ফেরত যাবে, এটি বৈঠকে সবাই মেনে নিয়েছে।’

ওয়ার্কিং গ্রুপ কোন পর্যায়ে হবে এবং কীভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক ও বাংলাদেশে কর্মরত দুদেশের (চীন ও মিয়ানমার) রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে এটি গঠিত হবে।’

এই গ্রুপ অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করছে এবং সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে তিনি জানান।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দিন নির্ধারিত ছিল কিন্তু প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। ওই সময়ে চীনের প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে ছিল এবং তারা নিজেদের চোখে দেখেছে বাংলাদেশ কী করছে এবং রোহিঙ্গারা কেন ফেরত যেতে চায় না।’

এরপর চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মাদ আবদুল হামিদের কাছে ২৯ আগস্ট তার পরিচয়পত্র পেশ করার পরে রোহিঙ্গাদের বক্তব্য শোনার জন্য কক্সবাজার পরিদর্শন করেন বলে তিনি জানান।

আরও খবর