থাকতে মরিয়া রোহিঙ্গারা, পেছনে কলকাঠি নাড়ছে এনজিওগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট • নিশ্চিন্ত-আয়েশি জীবন রোহিঙ্গাদের। কাজকর্ম করতে হয় না, তারপরও খাওয়া-পরার কোনো অভাব নেই। উপরন্তু অতিরিক্ত খাবার ও নানা সামগ্রী বিক্রি করে তারা। এ থেকেও মাসে বেশ টাকা আয় হয়। এভাবেই মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকরা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করে আয়েশি জীবন পার করছে। এ কারণেই নিজ দেশে যেহেতু মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে গেলে পরিশ্রম করে বা সংগ্রাম করেই বাঁচতে হবে, তাই বাংলাদেশে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা নাগরিকরা। গত এক সপ্তাহ জুড়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা বসতির বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিন গত ৯ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালংয়ে এক নম্বর ক্যাম্পের আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে গেলে সেখানে পাওয়া যায় রোহিঙ্গাদের আলোচিত শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে।

এ সময় মুহিবুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশি কতিপয় গণমাধ্যম বলেছে ‘আমি ন যাইয়ুম বলেছি। অথচ ন যাইয়ুম একবারও বলিনি।’

তবে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সমন্বয়ক করিম উল্লাহ কলিম সময়ের আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা নেতা থেকে শুরু করে তারা অধিকাংশই ব্যাপক চতুর ও কৌশলী। এরা নিজেদের প্রয়োজনে শত শত মিথ্যা বলে এবং যা কিছু করতে পারে। তিনি বলেন, এ দেশে ঠাঁই পেয়ে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তা পৃথিবীর আর কোথাও তারা পাবে না। এটা তারাও ভালোভাবে জানে। মূলত এত বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এ দেশে ছাড়তে চায় না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের দায়িত্বশীলরা বরাবরই বলছেন, রোহিঙ্গাদের আর এখানে রাখা সম্ভব নয়। নিজ দেশ মিয়ানমারেই তাদের ফিরে যেতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গারা এবং তার আগের পুরনো রোহিঙ্গারা মিলেমিশে এখানে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। এতে মূল ভুমিকা রাখছে পুরনো রোহিঙ্গারা। কেননা তারা এখানে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে স্থানীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তাসহ নানা সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তারা বিভিন্ন সেক্টরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও দালালের মাধ্যমে সখ্য গড়ে তুলেছে। সেই মাধ্যম কাজে লাগিয়ে তারা চক্রের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্ট ও জন্মসনদ সংগ্রহ করছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, একশ্রেণির মক্তব-মাদ্রাসা ও কক্সবাজার-চট্টগ্রামের কিছু কওমি মাদ্রাসায় রোহিঙ্গারা অনেকটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি ও শিক্ষার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এরপর ওইসব মাদ্রাসা থেকে তারা একধরনের সনদ নিয়ে সেটি ব্যবহার করে স্থানীয় প্রভাবশালী বা দালাল ম্যানেজ করে জন্মসনদ বা ইউপির পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছে। এরপর ওইসব ‘প্রমাণপত্র’ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এনআইডি ও পাসপোর্টও করতে পারছে রোহিঙ্গারা। এছাড়াও স্থায়ী বসবাসের পরিকল্পনায় তারা এখানে গোপনে বাংলা ভাষা শিখছে। এসব প্রক্রিয়া শেখানোর পেছনেও অনেক ক্ষেত্রে সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি কিছু এনজিও। এভাবে রোহিঙ্গারা এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করা একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নীতিমালায় এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যার ফলে রোহিঙ্গারা না চাইলে জোর করাও যাবে না। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের মর্জি বা ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে প্রত্যাবাসন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে স্থায়ীভাবে থাকার লক্ষ্যে সবধরনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। অন্যদিকে এনজিওগুলো রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন থাকলে তাদেরও কর্মকান্ড বা চাকরি দীর্ঘদিন থাকবে সেই আশায় প্রত্যাবাসনবিরোধী নানা কর্মকান্ড চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কৌশলে প্রত্যাবাসনে নিরুৎসাহিত করছে এনজিওগুলো।

সরেজমিন গত ১১ সেপ্টেম্বর কুতুপালং লম্বাশিয়া ১নং ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ক্যাম্প ম্যানেজার রেদোয়ানের (এনজিওকর্মী) কার্যালয়ে গেলে সেখানে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে এনজিওকর্মীরা রোহিঙ্গাদের কথা বলতে বারণ করে। তারাও চেপে যায়।

এক পর্যায়ে রেদোয়ানের সঙ্গে এ প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে এনজিও বড়কর্তাদের নিষেধ আছে বলেও জানান তিনি।

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে সেখানেও একই অবস্থা লক্ষ করা যায়। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক একটি এনজিওর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চিকিৎসক সময়ের আলোকে বলেন, এনজিওর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করেছেন। এর আগে একজন চিকিৎসক এনজিওকর্মী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একাধিক কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, রোহিঙ্গারা এখানে নিজেদের খুব প্রভাবশালী মনে করছে। রোহিঙ্গারা যেন এখানে স্থানীয় নাগরিক এবং স্থানীয়রাই যেন রিফুইজি বা আগন্তুক। তারা বলেন, রোহিঙ্গারা অত্যন্ত চালাক হয়ে গেছে। তাদের বেশিরভাগই এখানে এসে অসুস্থতার ভান করে ফ্রি ওষুধ নিয়ে বাইরে বিক্রি করছে। অসুস্থতার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করলেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মারমুখী আচরণ করতে থাকে।

আরও জানা গেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবাধিকার, অন্ন-বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে কাজ করা বেশিরভাগ এনজিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কৌশলে এখনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) ছাতাতলে থেকে এসব এনজিও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী কলকাঠি নাড়ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ভেতরে ঠিক কী ঘটছে তা খুবই কমই প্রকাশ পাচ্ছে। এসব এনজিও কক্সবাজারে বিলাসী জীবন ও মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরির সুযোগ-সুবিধার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও খবর