চকরিয়ার ‘শাপলাবিলে’ মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

মুকুল কান্তি দাশ • চকরিয়া

আগাছা আর লতাগুল্মে ভরা বিলের পানিতে ফুটে আছে হাজার হাজার নানা রঙ্গের শাপলা। সূর্যের সোনালি আভা শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে বিলের সৌন্দর্য। নৌকা কিংবা কোমর উর্ধ্ব পানি মাড়িয়ে বিলের ভেতর ঢুকলে মনে হবে বাতাসের তালে তালে এপাশ-ওপাশ দুলতে দুলতে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে শাপলার দল। সে হাসিতে বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দের ফল্গুধারা।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের অপরূপ সৌন্দর্য্য স্থান ঐতিহ্যবাহী নলবিলার ‘শাপলা বিল’।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি এই শাপলার বিল। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। একপাশে মহাসড়ক, অপরপাশে গ্রামীণ বসতি, অন্য দু’পাশে গহিন অরণ্য ঘেরা পাহাড়। ঘন সবুজ বন ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার শাপলাবিল লাগোয়া সবকিছু মিলিয়ে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারে এক নতুন কোন জগতে। বিলে যেতে যেতে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! নিশ্চিতভাবে কিছুক্ষণের জন্য আপনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে চলেছেন।

পাহাড়ের ঝিরি-উপঝিরি ও হাজারো একর জলাবদ্ধ নলবিলার জমিতে লাল-হলুদসহ নানা রঙ্গের শাপলা ফুল ফুটে রয়েছে বিলের ঝিলে। বছরের আট মাসই এই শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। শীতের চাষাবাদের লক্ষ্যে মেশিন বসিয়ে পানি বাইরে না ফেললে বছর জুড়েই এই শাপলা বিলে দর্শনার্থীরা বিনোদন আহরণ করতে পারবে।
বিশাল এ বিলে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণ পিপাসুদের। হাজার হাজার শাপলার মাঝ দিয়ে নৌকা নিয়ে গেলে মনে হয় শাপলার দেশে যেন এক খন্ড নৌকা। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগে দর্শনার্থীরা দলবেঁধে ছুটে যায় নলবিলা ‘শাপলা বিলে’। এখানে সারা বছর শাপলা ফোটার কারণে এটিকে স্থানীয় মানুষ নাম দিয়েছে নলবিলার ‘শাপলা বিল’। শাপলা ছাড়াও এখানে প্রতি বছর শীত মৌসুমে আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই শাপলা বিলে।

উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের মাঝখানে বিশাল অংশজুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। বর্ষা মৌসুমে এই বিলে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে। বর্ষার পরপরই পানি একটু কমলে প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসুরা ছোট নৌকা নিয়ে ঘুরতে যায়। বর্ষার জলরাশির বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে শাপলা ফুটে, তার সাথে নৌকার পাল তুলে ঘুরতে কার না মন চায়।
বিশেষ করে ঈদ ও কোরবানির সময় ছাড়াও ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে শাপলা বিল। দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে দুর-দূরান্ত থেকে শতশত দর্শনার্থী ছুটে আসছে। কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, লামা, আলীকদমসহ দুই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসছে শাপলাবিলে।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বসে শাপলা বিলে হাজার হাজার শাপলা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় দর্শনার্থীরা। রাস্তার পাশ থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাপলা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। এই শাপলা বিলে ভিড় করে শিক্ষার্থীরা অবসর সময় কাটাতে ঘুরতে যায়। আস্তে আস্তে শাপলা বিলে সৌন্দর্য্য উপভোগে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠছে। যদি প্রশাসনের পক্ষে নানাবিধ সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে নলবিলা শাপলা বিল পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।

নলবিলা ‘শাপলা বিলে’ ঘুরতে যাওয়া একজন দর্শনার্থী তাওরিফ ইবনে আবেদিন বলেন, বিকেল বেলায় দর্শনার্থীরা শাপলা বিলে নৌকা ভ্রমণে আসে শুনে আমরা দল বেঁধে ১৫ জন বন্ধু এসেছি। নৌকায চড়ে শাপলা বিল ঘুরে খুব ভাল লেগেছে এবং উপভোগ করেছি নতুন আনন্দ।
তিনি আরো বলেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে এখানে বসার ও পর্যটন টাওয়ার করা হয় এবং প্রশাসনের তদারকিতে নৌকার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে দিন দিন দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাবে।

নলবিলা ‘শাপলা বিল’ নৌকা নিয়ে বেড়াতে যাওয়া দর্শনার্থী জামশেদ উদ্দীন বলেন, ‘বর্ষা থেকে শুরু করে প্রায় ৬-৮ মাস শাপলা বিলে প্রচুর পানি থাকে। এসময় শাপলা ফুলে ভরে যায় বিলটি। এসময় দর্শনার্থীরা দলবেঁধে ঘুরতে যায়। বিকেল বেলায় শাপলা বিলে ঘুরতে খুব ভাল লেগেছে আমাদেরও। শাপলা বিল ছাড়াও দু’পাশের পাহাড়ে ঘেরা মনোরম পরিবেশ আকৃষ্ট করেছে।

যাওয়ার উপযুক্ত সময়: জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

যাতায়াতঃ
চট্টগ্রাম থেকে যেকোন বাস যোগে ১৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে চকরিয়া সরকারি কলেজ গেট ও কক্সবাজার থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় একই স্থানে নেমে শাপলা বিলে যাওয়া যায়। চকরিয়াসহ আশপাশের উপজেলার লোকজন প্রাইভেট গাড়ি না থাকলে চিরিংগা স্টেশন থেকে রিকশা, টমটম বা সিএনজি নিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় নরবিলার নৌকার ঘাটে। ওখান থেকে ১-২ ঘন্টার জন্য ২০০-২৫০ টাকায় নৌকা ভাড়া নিয়ে সরাসরি যাওয়া যাবে শাপলাবিলে।
শাপলা বিক্রিতে সৌন্দর্য্য নষ্টঃ

নলবিলা বিল জুড়ে এখন শাপলার সমারোহ। এই শাপলা দেখতে দর্শনার্থীর আনাগোনার মাঝেও স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি প্রতিদিন হাজার হাজার শাপলা বিল থেকে তুলে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে এই শাপলাবিলের সৌন্দর্য্য। স্থানীয় জনগণ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। এবং সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সরজমিনে দেখা মেলে বিল থেকে শাপলা তুলে নৌকায় করে মহাসড়কের পাশে স্তুপ করে রাখছে অসাধু ব্যক্তিরা। পরে ওই শাপলা কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহণে তুলে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। এতে হতাশ হচ্ছে স্থানীয় লোকজনসহ বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী। পকেট ভারী করছে অসাধু ব্যক্তিরা।

আরও খবর