দুলাভাইয়ের হাত থেকে অপহরণের দেড় বছর পর শালীকে উদ্ধার

মোহাম্মদ উল্লাহ, চকরিয়া :

আপন দুলা ভাই কর্তৃক অপহৃতা শালিকা বিবি মরিয়ম (১৫) প্রকাশ মুক্তাকে উদ্ধার করেছেন চকরিয়া থানা পুলিশ। গত ২৭ আগস্ট রাতে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার ও মোবাইল ট্রাকিংয়ের এলাকা সনাক্ত করে সিকদার পাড়ার পূর্ব বড় ভেওলা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ১৬মাস শালীকে জিম্মি করে রেখে ছিল লম্পট দুলাভাই সাহেদুল ইসলাম আনসার।

মামলার বাদী আনোয়ারা বেগম জানান,গত ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল বড় মেয়ের জামাই শাহেদুল ইসলাম আনসার (৩০) তার শালিকা মরিয়মকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।এঘটনায় শ্বাশুড়ী আনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে তার ছোট মেয়ে বিবি মরিয়মকে অপরহরণের অভিযোগে বড় মেয়ের জামাই আনসারের বিরুদ্ধে চকরিয়ার সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৩৪-২০১৮।

তিনি পূর্ববড়ভেওলা ইউনিয়নের সিকান্দরপাড়ার নুরুল আমিনের মেয়ে বলে জানা যায়। উদ্ধার করার পরপরই মরিয়মকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়।

বর্তমান মামলার তদন্তকারী কর্মকমর্তা এসআই চম্পক বড়–য়া বলেন,দীর্ঘ দেড় বছর পুলিশ তদন্ত করে প্রযুক্তি ব্যবহার ও মোবাইল ট্রাকিংয়ের এলাকা সনাক্ত করে অবশেষে তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

গত ২০০৯ সালে উপজেলার পূর্ববড়ভেওলা ইউনিয়নের সিকান্দরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কবির আহমদের পুত্র শাহেদুল ইসলাম আনসারের সাথে একই এলাকার নুরুল আমিনের কন্যা রোকসানা আক্তারের মধ্যে ইসলামী শরিয়া মতে বিবাহ হয়।বিবাহের দশবছর দাম্পত্য জীবনে নিস:সন্তান ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দেড়বছর ধরে মরিয়মকে আত্মগোপনে রেখেছিলো লম্পট দুলাভাই সাহেদুল ইসলাম আনসার।বড় বোনের শ্বাশুর বাড়িতে থেকে বিবি মরিয়ম পড়াশোনা করতেন। সেই সুযোগে শালিকা মরিয়মের উপর কু-নজর পড়ে লম্পট দুলা ভাইয়ের।তার স্ত্রী যখন বাপের বাড়িতে বেড়াতে যায় তখন শালিকাকে চিরিঙ্গা আসার নাম দিয়ে অপহরণ করে আত্্রগোপন চলে যায়।

অপহরণের ঘটনাটি জানাজানি হলে বাপের বাড়িতে থেকে যায় স্ত্রী রোকসানা আক্তার। ঘটনার দুই মাস পর জানতে পারেন তারবড় মেয়ের জামাই ছোট মেয়েকে নিয়ে গেছে।
তখন শ্বাশুড়ি আনোয়ার বেগম বাদি হয়ে মেয়ের জামাই শাহেদুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।আদালতের হাকিম মামলাটি তদন্তপূর্বক মামলা নেওয়ার জন্য চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিলে ঘটনার সত্যতার মিললে মামলা রজু করে আসামী গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ মাঠে নামে ।

তৎতকালিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই গাজী মাঈনুদ্দিন চট্টগ্রাম থেকে প্রধান আসামি শাহেদকে গ্রেফতার করলেও শালিকা বিবি মরিয়মকে উদ্ধার করতে পারেনি।বাদী অভিযোগ করে বলেন,মুল আসামীকে আটক করলেও তৎতকালিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী মাঈন উদ্দীনরে নানা ব্যর্থতার নানা অনিয়মের কারণে আমার মেয়েকে পুলিশ উদ্ধার করেনি।অপর দিকে,আটকের পর আসামী শাহেদ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরি আসলে ভিকটিম উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে।

কিন্তু বর্তমান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই চম্পক বড়–য়ার আসামীর পিছু ছাড়েনি এবং হতাশ না হয়ে বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার অভিযান চালায়।তার পরও ভিকটিম উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রাখে।অবশেষে তার সফলতা মিলে প্রযুক্তি ব্যবহার ও মোবাইল ট্রাকিংয়ের এলাকা সনাক্ত করে সিকদার পাড়ার থেকে গত২৭ আগস্ট দুলা ভাইয়ের কবল থেকে অপহৃতা বিবি মরিয়মকে উদ্ধার করে।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন,আসামী খুবই চালাক ও উচ্চতর আদালত হতে জামিনে আসার পর ভিকটিমকে উদ্ধার করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।দীর্ঘদিন ধরে দুলা ভাই আনসার তার শালিকা মরিয়মকে প্রায় দেড় বছর আত্মগোপনে রেখেছিলেন।পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে ভিকটিমকে তার বাড়ির সামনে রেখে পালিয়ে যায় আনসার।বর্তমানে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) একেএম শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, দেড় বছর পর দুলা ভাইয়ের কবল থেকে শালিকাকে উদ্ধার করার পর ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।##

আরও খবর