শফিক আজাদ, উখিয়া :
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় নেওয়া ১১লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে প্রায় ৯০% রোহিঙ্গা বিভিন্ন অপারেটরের অবৈধ সিমকার্ড ব্যবহার করে আসছে। মাত্র ২৫০-৩০০ টাকায় বায়োমেট্রিক নিবন্ধন বা আঙ্গুলের ছাপ ছাড়াই রোহিঙ্গারা স্থানীয় দোকান এবং অসাধুচক্রের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে সিমকার্ড। এতে দিন দিন ক্যাম্পের নিরাপত্তা হুমকিতে দিকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা বার্তা ছড়িয়ে নানান ধরনের জটিলতা, সংঘাত সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরজমিন ক্যাম্প ঘুরে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অচল, চোঁখের সমস্যা আছে এবং পাগল এ ধরনের ১০% ছাড়া বাকিদের সবার কাছে এক বা একাধিক মোবাইল ফোন রয়েছে। প্রত্যেক মোবাইলে দুইয়ের অধিক সিমকার্ড আছে। লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মাহামুদুর রহমান সাথে কথা হলে সে বলেন, তার দুইটি মোবাইলে ৪টি সিমকার্ড রয়েছে। তৎমধ্যে ২টি রবি, ১টি গ্রামীনফোন আরেকটি টেলিটক। সব মিলিয়ে প্রায় ১০লাখ মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার হচ্ছে ক্যাম্পের অভ্যান্তরে। আর এই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ক্যাম্পে অবৈধ সিমকার্ড ব্যবহার বন্ধে গত রবিবার উখিয়া উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ সিমকার্ড বন্ধের উদ্যোগ গ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার চিন্তা করে অনিবন্ধিত মোবাইল সিম বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে উপজেলার সকল মোবাইল সিমকার্ড বিক্রয়কারী প্রতিষ্টান মালিকদের সাথে বৈঠক করা হবে। তাদের নিকট থেকে মতামত গ্রহন করা হবে।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্টিত হবে, এতে জেলা প্রশাসক মহোদয় এসব কথা তুলে ধরবেন। আশাকরি খুবদ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধৈব সিমকার্ড বন্ধ করা হবে।
তিনি এসময় বলেন, ইতিপূর্বে ক্যাম্পে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ১০-১২ জন মোবাইল দোকানদারকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এসব অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছে। এতে খুব সহজে এখানকার রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্বগোত্রীয়দের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল হতে দিচ্ছে না রোহিঙ্গাদের একটি শক্তিশালী চক্র। মোবাইলে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন বিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ঐকমত্যে আসতে দিচ্ছে না প্রত্যাবাসন বিরোধীরা। তাই অবৈধ মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ককে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার অন্যতম কারণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছিলেন, কিছু মানুষ নিজেদের বায়োম্যাট্রিক তথ্য ব্যবহার করে নিবন্ধিত সিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিক্রি করছেন। যেসব বিক্রেতারা এধরণের সিম বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, বিভিন্ন বাজারে বা দোকানপাটে প্রকাশ্যেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে মোবাইল সিম বিক্রি হয়ে আসছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল মনসুর বলন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা অপরাধ করছেন এমন সরাসরি কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-