কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের চাপে স্থানীয়রাই এখন সংখ্যালঘু

আবদুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন •

বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থী কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। রোহিঙ্গাদের চাপে এখন এখানকার স্থানীয়রাই সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, বেকারত্ব ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ ৯৪ হাজার। এর মধ্যে রয়েছে–উখিয়ায় ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬শ’ এবং টেকনাফে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪শ’। সেখানে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সহিংস ঘটনার পর পালিয়ে আসা সাড়ে ৭ লাখসহ মোট ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪১৭ জন রোহিঙ্গা বাস করছে। এসব রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস করে বসতি গড়ে তুলেছে।

রোহিঙ্গা আশ্রিত ক্যাম্পগুলোর সঙ্গেই রয়েছে স্থানীয়দের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতি ও চাষযোগ্য জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ কারণে অনেকের ভিটেবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও চাষাবাদের জমি অঘোষিতভাবে দখল করে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে স্থানীয় দরিদ্র লোকজন। একইভাবে শ্রমবাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

নিত্যপণ্যের বাজার গরম

উখিয়া ও টেকনাফের বাজারগুলোতে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। রোহিঙ্গাদের কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। উখিয়ার কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ত্রাণ হিসেবে চাল পাচ্ছে। এ কারণে চালের বাজার এখনও স্থিতিশীল রয়েছে। তবে এখানে সবজির দাম আকাশচুম্বী। মাছ তো সময়মতো পাওয়াই যাচ্ছে না!’ একদিকে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ বিচরণ, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজার গরম হওয়ায় বিপাকে পড়েছে স্থানীয়রা।

বনাঞ্চল ধ্বংস

রোহিঙ্গাদের বসতির কারণে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন উখিয়া ও টেকনাফে ৬ হাজার ১৬৩ একর বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৭ একর সৃজিত বন (প্রধানত সামাজিক বনায়ন) ও ৪ হাজার ১৩৬ একর প্রাকৃতিক বন রয়েছে। এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০ রোহিঙ্গা বনাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। তাদের জন্য ২ লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি গোসলখানা, ত্রাণ সংরক্ষণের জন্য ২০টি অস্থায়ী গুদাম, ১৩ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন, ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং ২০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক একটি অবকাঠামো তৈরি করবে। এজন্য এক হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার বন ধ্বংস হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার পরিবেশ, বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য। এছাড়া বসতি স্থাপন করতে গিয়ে এশিয়ান হাতির আবাসস্থল ও বিচরণক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শ্রমবাজারে মন্দা

রোহিঙ্গাদের আগমনে স্থানীয় কিছু শিক্ষিত যুবকের ক্যাম্পে কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে ১০৫টি এনজিওতে স্থানীয় দুই হাজার শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে পুরো কক্সবাজার জেলায় শ্রমবাজারে দেখা দিয়েছে মন্দা। রোহিঙ্গারা দিনমজুরিসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় শ্রমিকরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘উখিয়ায় বাড়তি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে চাল, ডাল ও তেলসহ কিছু পণ্যের দাম কম। অন্যদিকে, জেলার শ্রমবাজারে মন্দাভাব দেখা দিলেও বেশ কিছু শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

আরও খবর