রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার
সম্ভাব্য সম্মেলনকে ঘিরে সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে শুরু হয়েছে শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। নিজেদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব জাহির করতে প্রতিনিয়ত গ্রুপ ভারি করে শক্তির জানান দিচ্ছে সভাপতি-সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নেতা ও তাদের অনুসারীরা। এ ছাড়াও চলছে চরিত্রহনন, হুমকি পাল্টা হুমকির মতো ঘটনাও। এ জন্য বেছে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ফেক আইডি ও অখ্যাত অপরিচিত অনলাইনকে। এসব ঘটনায় বাড়ছে রেষারেষি, কাদা ছোড়াছুড়ি ও চ্যালেঞ্জ পাল্টা চ্যালেঞ্জের ঘটনা।
এ নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সাবেক ছাত্রনেতারা। তাদের মতে, নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু তা যদি প্রতিহিংসায় রূপ নেয়, তা খুবই দুঃখজনক।
আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পর থেকে পদ প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন। প্রতিদিনই প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।
প্রার্থী তালিকায় অতীতে ছাত্রলীগ করেনি এমন প্রার্থী যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মাদকসেবী, অছাত্র, বিতর্কিত ও চাঁদাবাজ প্রার্থীও। এর বাইরে রয়েছে গোষ্ঠী ও পরিবারকেন্দ্রিক প্রার্থী। এসব প্রার্থীদের ভিড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাকর্মীরা।
সম্ভাব্য সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সমপাদক পদের জন্য দেড় ডজন ছাত্রনেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, সাবেক ছাত্রনেতা প্রশন্ত ভূষণ বড়ুয়া ও বর্তমান জেলা সভাপতি ইসতিয়াক আহম্মেদ জয় ও সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হোসেন তানিমের অনুসারীরাও রয়েছেন।
শোভনের অনুসারীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক মঈন উদ্দিন, এসএম সাদ্দাম হোসেন, সরওয়ার আজম ও নারিমা জাহান। সাখাওয়াত হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি অ্যাডভোকেট একে আহম্মদ হোসাইনের ছেলে।
এ ছাড়া সাখাওয়াত হোসাইন ও এসএম সাদ্দাম হোসেন সাবেক ছাত্রনেতা প্রশন্ত ভূষণ বড়ুয়ার আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবেও পরিচিত। সরওয়ার আজম চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের লোক হিসেবে পরিচিত। গোলাম রব্বানীর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান আপ্যায়ন সম্পাদক কায়সার চৌধুরী রুবেল, শিক্ষা ও পাঠচক্র উপ-সমপাদক মারুফ আদনান ও এহেছানুল হক মিলন। রুবেল জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক পরিবার হিসেবে পরিচিত, সাবেক জেলা সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। মারুফ আদনান জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুলের ছেলে। এর বাইরে বর্তমান সভাপতি ইসতিয়াক আহম্মদ জয়ের অনুসারীরাও বসে নেই। ইসতিয়াক আহম্মদ জয় যার জন্য মুখ খুলবেন তাকেও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আপাতত জেলা সভাপতির অনুসারীদের মধে মাঠে রয়েছেন মারুফ ইবনে হোসেন, ইব্রাহিম আযাদ বাবু, নাজমুল হোসেন শাকিল ও সাখাওয়াত হোসেন তুর্য।
অপরদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হোসেন তানিম নিজে সভাপতি প্রার্থী বলে জানান। তবে তানিম কোন কৌশলে আগাচ্ছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। কোনো কারণে তানিমের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিলে বিকল্প প্রার্থীও রয়েছে। সেক্ষেত্রে জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও সহোদর সাজ্জাদ হোসেন শুভ কিংবা শহর ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান ইকবাল রিপন হবেন তার প্রার্থী।
এ ছাড়াও দপ্তর সম্পাদক শাহ নিয়াজ, প্রচার সমপাদক আলিফ উজ্জামান শুভ, যুগ্ম সাধারণ সমপাদক বোরহান উদ্দিন খোকন, সাবেক জেলা সভাপতি আলী আহম্মদের ছোটভাই আনোয়ার হোসেনও প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলায় প্রচারণার পাশাপাশি কেন্দ্রীয়পর্যায়ে জোর লবিং চালাচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ পদ প্রত্যাশীরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের আশীর্বাদ পেতে ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াতের মধ্যে ব্যস্ত রয়েছেন অধিকাংশ প্রার্থী। সাবেক ছাত্র নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন অনেকে।
আবার অনেক প্রার্থী ধর্ণা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাসা-বাড়িতে। যাদের ঢাকায় গিয়ে লবিং করার সামর্থ্য নেই, তারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের নানাভাবে সমর্থন ও উৎসাহ যোগাচ্ছেন জেলার সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারা।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সমপাদক মোর্শেদ হোসেন তানিম বলেন, সম্মেলন করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিদের্শনা পেয়েছি। নির্ধারিত তারিখে সম্মেলন করার জন্য কাজ করছে জেলা ছাত্রলীগ। শোকের মাস শেষ হলে পুরোদমে সম্মেলন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, মাদকাসক্ত, অছাত্র ও অর্ধশিক্ষিত, বয়স্কদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো প্রকার ছাড় দেবে না। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসতিয়াক আহম্মদ জয় বলেন, শতভাগ গঠনতন্ত্র মেনে শিক্ষা, বয়স ও চরিত্র মূল্যায়ন করেই সভাপতি ও সাধারণ সমপাদক পদে মনোনয়ন দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজার ছাত্রলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল উপহার দিতে জেলা ছাত্রলীগ প্রস্তুত বলে জানান ইসতিয়াক জয়।
জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর। তবে কমিটি ঘোষিত হয় ২০১৫ সালের ১০ই জানুয়ারি। এতে ইসতিয়াক আহমেদ জয়কে সভাপতি এবং ইমরুল রাশেদকে সাধারণ সমপাদক করা হয়। পরবর্তীতে ইমরুল রাশেদ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়ে দেন। সেই থেকে মোর্শেদ হোসেন তানিম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সমপাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৭ সালের ১০ই জানুয়ারি গঠনতন্ত্র মোতাবেক বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরে কয়েকদফা সম্মেলনের তারিখ দেয়া হলেও রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-