আলমগীর মাহমুদ
চিরসুখী জন, ভ্রমে কি কখন
ব্যথিত বেদন বুঝিতে কি পারে!
কি যতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে…
সমাজবিজ্ঞান বিভাগে নান্দনিক আবহের একটি ছাতা গেরস্তহীন পড়ে রইতে দেই।একদিন,দুদিন । দেখলেই ভাবায় গেরস্থহীন দ্রব্যও কত অসহায়!এই ছাতাটি দেখে ‘আমার হারানো সেই ছাতাটিকেও স্মৃতিতে শুধু নাড়াচ্ছিল!
সেদিন আমার যে দশা আজ ছাতা হারানো আদম সন্তানের বুকেও সে লালবাতি। দ্রব্য ফেরত পেতে “এই ছাতা কি আপনার! “শিরোনামে ছাউর করতেই রাজীব শাহরিয়ারও এমন একটি স্মৃতিময় বর্ণনা মন্থন করে। লুকিয়ে থাকা কথাটা আর রইল না গোপনে।
স্মৃতির গায়ে টুকা পড়ায় কবির অমর কথাই আরেকবার জীয়ন কাঠির পরশ বুলিয়ে গেল।নইলে সামান্য স্মৃতি ভুলতে না পেরে লিখলাম বলে কতজনই কৃপনের খাতায় নাম তুলত আমার।
এমন একটা জ্বালার স্মৃতিকে ক্ষত চিহ্নের মতই বয়ে বেড়াই।যাহ এখনো আমারে পোড়ায়।আর সে স্মৃতি ও ছিল একটা ছাতাকে নিয়ে।
ব্যবহারের জিনিস হারানোর দাগ ও দগ দগ করে জ্বলে।আজ থেকে ৮থেকে ১০ বছর আগের ঘটনা।
বর্ষা নিবারনে ছাতা কিনেছিলাম।ছাতার নির্মাণ শৈলী, আভিজাত্যময় কালার আমারে যে আবহ দিয়েছিল তাকে দীর্ঘজীবি করতে ছাতার ভেতর নাম। মোবাইল নং লিখেছিলাম।
লিখার পর মনের তাগাদা, কত আলমগীর আছে নামের আগে অধ্যাপক লাগা। যদি কারো দখলেও যায় সে যেন বার বার বিবেকের চাপে থাকে।
নামের আগে অধ্যাপক কথাটা ততবেশী সাবলীলভাবে আসে না।তারপরও উপায়ান্তর না থাকলেই লাগাই।এখানেও বাধ্য হয়েছিলাম।
উখিয়া কলেজে সহপাঠক্রমিক কর্মের অংশ হিসেবে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান করতাম।একদিন এমন এক অনুষ্ঠানের ব্যস্ততায় আমার ছাতাটি হারিয়ে যায়।আমি অনুষ্ঠান শেষে বেশ কষ্ট অনুভব করি।ছাতার চেয়ে পছন্দের কারণে।
পরদিন রাত প্রায় ১২টার কাছাকাছি।ওপাশ থেকে ” স্যার আমি হলদিয়া পাতাবাড়ির অভিজিৎ বড়ুয়া।আই,এ দ্বিতীয় বর্ষের। যাকে দেখলে আপনি শুধু হাসিতেই বলেন “আমার অভিজিৎ নাকি!আমি আপনার সেই অভিজিৎ।
গেলকাল হলরুমে শেষ মানুষটিই ছিলাম আমি।চোখ ধাঁধানো একটি ছাতা বেওয়ারিশ পড়ে রইতে দেই। হাত বাড়িয়ে যুথসই আছে কিনা দেখতে খুলছি আর ভাবছি ” পেঁড়াই পাইয়া সোনা কানে দিতে মানা নেই”(কূঁড়িয়ে পাওয়া স্বর্ণ কানে দিতে নিষেধ নেই)ভেতরে আপনার নাম দেখে কলিজা চিকুর মারে।মনে বাজে “আলমগীর স্যারের জিনিসতো সমস্যা নাই।”
আমার মত ছোট মানুষতো আর উনার উপহারে এই দ্রব্যের মালিক বনতে পারবো না।উনি আমারও ভালবাসার মানুষ। উনার কোন স্মৃতি না পাওয়ার চেয়ে কিছু না জানিয়ে এটি রেখে দেয়া উত্তম ভেবে গেলকাল ফোন করিনি।
ছাতা খুলে যখন নাম আর মোবাইল নংটা দেখি তখনই বিবেকে ঘোড়ার গায়ে চাবুক মারার অনূভুতি পাই।অচিন মনে প্রশ্ন জাগায় কাজটা ঠিক করছিতো!ঠিক করছিতো!
সেদিন ওর এমন আবেগমাখা কথা শুনে মনের অজান্তেই বেরিয়ে আসে “অভিজিৎ আমি আমার সমস্ত দাবী ত্যাগ করে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে নিঃস্বার্থ হইলাম।এই ছাতার সমস্ত স্বার্থ,স্বত্ব তোমার বরাবরে অর্পণ করিলাম।
আমিও আমার ওলী ওয়ারিশ গনও যদি মানবীয় দুর্বলতায় এ ছাতার দাবী করি,বা করাই তাহ আইনত অগ্রাহ্য বলিয়া দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হইবে।বলে অট্টহাসিতেই কথা শেষ করি।
এরপর বেলা হল অনেক। অভিজিত গেল প্রবাসে। আজো যখন একাকী স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়াই ” সে পুরোনো ক্ষতটি শুধুই আমারে জ্বালায়”!
লেখক- বিভাগীয় প্রধান (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) উখিয়া কলেজ
উখিয়া, কক্সবাজার।
ইমেইল – alamgir83cox@gmail.com
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-