জেলা শহরের অলি-গলিতে মশার অনেক প্রজনন ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। যেখানে-সেখানে ডাবের খোসা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার বা ছোটখাটো পাত্রই শুধু নয়; নির্মাণাধীন বা পরিত্যক্ত ভবন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের পরিত্যক্ত পরিবহনের মতো নতুন নতুন কিছু আধারেও স্বচ্ছ পানি জমে থাকার চিত্র চিহ্নিত হচ্ছে। এসব স্থানও এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
গতকাল সোমবার জেলা শহরের অলি-গলি ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত জেলায় ৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। অপর ৬ জন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলা সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত হেল্প ডেস্ক এর প্রধান ডা: আবু মো: শামসুদ্দিন জানান, গতকাল রাত পৌনে ৯ টা পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।
তাদের মধ্যে গতকালই ভর্তি হয়েছেন ৩ জন। ২ জন রামু উপজেলার বাসিন্দা। অন্যজনের বাড়ি টেকনাফে।
কক্সবাজার পৌর এলাকায় গত ২৮ জুলাই থেকে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করেছে পৌরসভা। কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষার শুরুতেই মশা তথা ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন ছিল। কাজেই দেরি না করেই আমাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। প্রথমত সবখানে মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ কাজে তৎপর হওয়া দরকার জরুরিভিত্তিতে।
এ ছাড়া ডেঙ্গুর প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি, ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা, ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করাও দরকার। জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথাও বিবেচনা করা দরকার।’
সরেজমিনে জেলা শহরের অলি-গলি ঘুরে দেখায় যায়, সর্বত্রই মশার নতুন নতুন প্রজনন ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। অনেক স্থানে ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে নালা-নর্দমা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন কবিতা চত্বর, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান সংলগ্ন এলাকা, ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতাল সংলগ্ন নালা-নদর্মায় পরিত্যক্ত অনেক ডাবের খোসাসহ ময়লা আবর্জনা। সেখানে জমে আছে নোংরা পানি। অনেক স্থানে নালার গতিপথ রূদ্ধ হয়ে গেছে। এদিকে কক্সবাজার পৌর এলাকায় গত ২৮ জুলাই থেকে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করেছে পৌরসভা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতার ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আমরা নিজেরা যত যাই করি না কেন, নিজেদের আগে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ারই হচ্ছে সচেতনতা। আমরা যদি আমাদের আশপাশের জায়গা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র করে রাখি, তাহলে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসবেনা। তাই সবাইকে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: মো: আবদুল মতিন বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে জেলায় ব্যাপক মাত্রায় প্রচার-প্রচারণা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নজরদারি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ আরো কিছু পদক্ষেপের সুবাদে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখানে অনেকটাই কম। তবে সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যাায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষ চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তরা যাতে হাসপাতালে আসার সাথে সাথেই ভালো চিকিৎসা পায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এডিস মশা এবং ডেঙ্গু জরের বিষয়ে সচেতনতা তৈরীর জন্য লোকজনকে কাউন্সিলিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
/দৈনিক কক্সবাজার
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-