মুহিবুল্লাহ মুহিব :
রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি, ইয়াবা পাচার, মানব পাচার ও ক্যাম্প ছেড়ে লোকালয়ে মিশে যাওয়া নিয়ে রীতিমত বিপাকে স্থানীয় প্রশাসন। ক্যাম্পের পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখার পরিকল্পনা আঁকছে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি।
জানা যায়, সন্ধ্যার পরপরই উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে যায় নীরব, নিস্তব্ধ। ক্যাম্পে অবস্থান নিতে পারেন না এনজিও কর্মীরা। সন্ধ্যার পরে এমন ভুতুড়ে পরিবেশে ক্যাম্পজুড়ে শুরু হয় দুর্বৃত্তদের আনাগোনা।
ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, রাতের অন্ধকারে প্রায় সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গা ক্যাম্প জুড়ে চালায় তাণ্ডব। আধিপত্য নিয়ে মারামারি, যৌন নির্যাতন, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটানো হয় সেখানে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে হত্যাসহ ২৩০টির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে। তার মধ্যে ২৫টির মতো খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় ২০০ রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে অস্ত্র আইনে ২৫টি মামলায় ৫৫ জন, মাদক আইনে ১০০ মামলায় ১৫০ জন, পাসপোর্ট আইনের ৬৫ মামলায় ৫০ জন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের দুই মামলায় দু’জন, অপহরণের পাঁচ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া চোরাচালান আইনের সাত মামলায় ১৫ জন, চুরির কয়েকটি মামলায় ১০ জন ও ডাকাতির আট মামলায় ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও, গত দেড় বছরে রোহিঙ্গা শিবির থেকে পালিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫৬ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত আনা হয়।
কুতুপালং ডি-৫ এর মাঝি সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘দিনে তেমন কোনো ঘটনা নেয়। তবে রাতে এক প্রকার আতঙ্কে কাটে রোহিঙ্গাদের। কারণ রাত হলেই কয়েকটি গ্রুপ এখানে মহড়া দেয়। যারা এলাকার দখলে নিতে এমন মহড়া দেয়।
বালুখালী ক্যাম্প ১৪ এর মাঝি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘রাত হলেই ক্যাম্পজুড়ে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ে। যার ফলে সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে থাকে। এ জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আরও বাড়ানো দরকার। তাহলে ক্যাম্পের মাঝিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও নিরাপদে থাকবে।’
টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভলপমেন্ট কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আলমের মতে, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা রোহিঙ্গাদের এ কাজে জড়াচ্ছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শিবিরে মাদক প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এনজিও কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাম্পে অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে এনজিওগুলো কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে রোহিঙ্গাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে কাজ করছে বলে জানান ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তারা।
পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রুপ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার পাশাপাশি ইয়াবা ও মানব পাচারের মতো ঘটনাতেও জড়াচ্ছে তারা।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, ‘অভিযানে গেলে ক্যাম্পে ফোর্সের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে। অপরাধ দমনে যৌথ টহল দেওয়ার চিন্তা করছে র্যাব। পাশাপাশি আশে-পাশের এলাকাগুলোতে র্যাব এখনো সক্রিয় রয়েছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শন করে গেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহা-পরিদর্শক, র্যাবের ডিজি ও বিজিবি প্রধান।
এ সময় পুলিশের মহা-পরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন তিন বাহিনীর প্রধান। ক্যাম্পের অপরাধ কমাতে আরও জনবল বৃদ্ধি করতে চাই আমরা। আগামীতে যাতে নিরাপত্তা হুমিকর মুখে না পড়ে সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বার্তা২৪
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-