ডেস্ক রিপোর্ট – মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে ১৯ জুলাই কক্সবাজার শরনার্থী শিবিরে তথ্য সংগ্রহে আসছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) একটি প্রতিনিধি দল।
১৭ জুলাই বুধবার ঢাকায় এসে পৌঁছায় দলটি। ১৮ জুলাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আইসিসির প্রতিনিধি দল।
১৯ জুলাই কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবে দলটি।তারা কক্সবাজারে অবস্থান করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে এবং এরপর তাদের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবে।
এর আগে, এক ই-মেইল বার্তায়, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো বর্বরোচিত অপরাধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাতেই প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা জানায় আইসিসি। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিও বর্ণনা করবে দলটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ”আমরা তাদেরকে সব ধরনের সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছি। তারা যে সহযোগিতা চায় সেটি সরবরাহ করা হবে।’”তিনি বলেন, এটি একটি অপারেশনাল পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এবং অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে তারা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আইসিসির প্রধান কৌসুলি ফেতো বেনসুদার মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।ফেতো বেনসুদা গত এপ্রিলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করার অধিকার আইসিসির আছে কিনা তা জানতে চেয়ে একটি আবেদন করেন। এর ওপর শুনানির পর গত সেপ্টেম্বরে আদালত সিদ্ধান্ত দেয় যে তার এই অধিকার আছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২৮ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ছয় লাখ ৯৩ হাজার ১৪ রোহিঙ্গা। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৪১৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এরমধ্যে আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন। নিবন্ধনকৃত আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। বাংলাদেশে অবস্থানের পর আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় বসতি স্থাপন করেছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর ৩০ জুনের (২০১৯) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ৭৩ হাজার ৪৪টি। এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাত লাখ ৪১ হাজার ৯৪৭ জন।
জাতিসংঘ দেশটিতে রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-