কক্সবাজারে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গরু চোর সিন্ডিকেট সক্রিয়

শাহীন মাহমুদ রাসেল :

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপকহারে গরু চুরি হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের পর থেকে গত এক মাসে রামু, সদর, চকরিয়া, পেকুয়া ও উখিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় অর্ধশত গরু চুরি হয়েছে। গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন কৃষক ও খামারিরা। চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় রাত জেগে খামার ও গোয়ালঘর পাহারা দেয়া হচ্ছে।

খামারিরা জানান, গ্রাম-মহল্লায় কিছুদিন ধরে ব্যাপকহারে গরু চুরি হচ্ছে। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে চোরের দল প্রায়ই রাতে কোনো না কোনো বাড়িতে হানা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে গরু চুরি করতে এসে এলাকাবাসির হাতে চোরদের গণপিটুনি খাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ গত বুধবার (১১ জুলাই) দিবাগত রাতে রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের জেটি রাস্তার মাথা এলাকার মোবারক আলীর বাড়ি থেকে চারটি গরু নিয়ে গেছে চোরের দল।

গরুর মালিক মোবারক আলী বলেন, প্রতিদিনের মতো রাতে গোয়ালঘরে গরুগুলোকে খাবার দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে যাই। রাতে কোনো একসময় চোরের দল গোয়ালঘরে ঢুকে চারটি গরু নিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে গোয়ালঘরে গরুগুলো দেখতে না পেয়ে চারদিকে খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু সারাদিনেও কোনো খবর না পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানাই।

তিনি জানান, চুরি হয়ে যাওয়া গরুগুলোর মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সদর ও রামু থানার কর্মকর্তারা গরুচোরদের উপদ্রব বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, টুকটাক গরু চুরি হচ্ছে। চুরির খবর পাওয়ার পর থেকে উপজেলায় রাতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। গরু চুরির বিষয়ে কেউ থানায় এজাহার জমা দিলে তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। এর আগে গরু চুরির মামলায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু চুরির কিছু খবর আসছে।

এদিকে সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়া এলাকার যুগেশ শর্মার বাড়ি থেকে ৪টি, একই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়া থেকে ৩টিসহ জালালাবাদ ইউনিয়নের ফরাজিপাড়া, খুরুশকুল ইউনিয়নের কাউয়ার পাড়া, টাইমবাজার, কুলিয়াপাড়া এলাকা ও রামুর কাউয়ারখোপ এলাকা হতে মোট ২৩টি গরু চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক।

উখিয়ার ঘোনার সওদাগর পাড়ার স্থানীয় কৃষক ও চুরি যাওয়া গরুর মালিক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, চুরি হওয়া গরুর মূল্য প্রায় চার লাখ টাকা। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে গরুগুলো মোটাতাজা করছিলাম। প্রতিরাতে গরুগুলো গোয়ালে বেঁধে রাখি, সকালে বাহির করি। কিন্তু ঘটনার দিন সকালে গরু বের করতে গিয়া দেখি গোয়ালঘর শূন্য। বিষয়টি তাত্ক্ষণিক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে জানানো হয়।

রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দুদু মিয়া জানান, রোজার ঈদের পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরু চোরদের তৎপরতা বেড়েছে। মঙ্গলবার সকালে কাটিরমাথা এলাকা থেকে তিনটি গরু চুরি করে পালানোর সময় স্থানীয়রা চোরের দলকে ধরে ফেলে। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাতে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাওলানা আনছার আলীর বাড়ি থেকে একটি গাভি ও একটি ষাড় চুরি হয়ে যায়। গরু দুটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক লাখ ৯ড় হাজার টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুচ ভুট্টু।

গত মাসের শেষ দিকে (২৩ জুন) উখিয়া উপজেলার পাতাবাড়ি এলাকা থেকে একটি গরু চুরি করে মরিচ্চা এলাকায় পালিয়ে যাওয়ার সময় চোরাই গরুসহ তিন চোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এছাড়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ে পিকআপে তল্লাশি চালিয়ে ৫টি চোরাই গরুসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। পিকআপটিও জব্দ করা হয়। এই ঘটনার একদিন আগে গত মঙ্গলবার (১০ জুলাই) ভোরে চকরিয়া উপজেলায় গরু চুরির অভিযোগে তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকা থেকে বিভিন্ন সময় ৮টি গরু চুরি করেছে তারা।

আরও খবর