চোখের সামনে স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার বর্ণনা দিলেন স্ত্রী মিন্নি

ডেস্ক রিপোর্ট – রিফাত শরীফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে কয়েকজন। তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তা ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফের চলল হামলা, যতক্ষণ না রক্তাক্ত হচ্ছেন শরীফ।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা শহরে দিনেদুপুরে এমন নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন রিফাত শরীফ (২২)।

এদিকে শরিফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সন্ত্রাসী দুই যুবক ধারালো দা দিয়ে একের পর এক কোপাতে থাকে শরিফকে। এ সময় শরিফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই সন্ত্রাসীকে বারবার প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

এ ঘটনাটি পুলিশের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় ছিল। নিহত রিফাত শরিফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল হালিম দুলাল শরিফ। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিফাত।

ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, ভিডিওচিত্রে যে দুই সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে, তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং অন্যজন রিফাত ফরাজী। তাঁরা উভয়েই স্থানীয়ভাবে ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ঘটনায় একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে বলে বরগুনা থানা সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে নিজের চোখের সামনে স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন স্ত্রী মিন্নি। আজ সকালে সাংবাদিকদের বললেন, আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি।

আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বলেন, সকাল ৯টার দিকে স্বামী রিফাত শরীফের সঙ্গে বরগুনা কলেজে আসি আমি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দেই আমরা। বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে পৌঁছালে বেশ কয়েকজন যুবক আমাদের গতিরোধ করে। সেই সঙ্গে রিফাত শরীফকে মারধর শুরু করে তারা। এর মধ্যেই চাপাতি নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী।

মিন্নি বলেন, নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী চাপাতি নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রিফাত শরীফকে জাপটে ধরে রিফাত ফরাজীর ছোট ভাই রিশান ফারজী। এরপরই রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী। আমি তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই তাদের থামাতে পারিনি। রিফাতকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায় তারা। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

মিন্নি আরও বলেন, ভিডিওতে যাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে মূলত তারাই প্রথমে রিফাত শরীফ ও আমার পথ আটকে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে তিন-চারজন রিফাত শরীফকে মারতে শুরু করেছিল। নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী চাপাতি দিয়ে রিফাত শরীফকে কোপাতে শুরু করলে তারা পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছিল। এরপর আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও রিফাত শরীফকে বাঁচাতে পারিনি।

আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আরো বলেন, ‘দিনদুপুরে যারা এমন করে, আমি তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই, আমি সবার ফাঁসি চাই, নয়নের ফাঁসি চাই।

এদিকে এ ঘটনায় নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরিফ বাদী হয়ে একটি মামলা করছেন বলে জানিয়েছে বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ সকালে চন্দন নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি এ মামলার ৪ নম্বর আসামি।’

আরও খবর