শাহীন মাহমুদ রাসেল :
বর্ষা মৌসুম এলেই আতংক ভর করে। তবুও ঝুঁকি নিতে হয়। মৃত্যুর ঝুঁকি। প্রতি বছর এ রকম অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনা চোখের সামনে ঘটলেও যাওয়ার যে আর কোনো পথ নেই। তাই তো মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আতংকিত বসবাস। কক্সবাজার সদর ও শহরতলির প্রতিটি পাহাড় চূড়ায় এবং পাদদেশে এভাবে বাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। এরা সবাই নিম্ন আয়ের। নদী ভাঙনে জমিজিরাত সব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে সপরিবারে আসা অসহায় লোকজন মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে নেয় এ ধরনের সস্তা ভাড়ার বস্তিতে।
সরকারি খাস জমি দখল করে যেমন এসব অবৈধ ঘর-বাড়ী গড়ে তোলা হয়েছে, তেমনি ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় কেন্দ্র করেও গড়ে উঠেছে অনেক বাড়ি। এসব বাড়ি কেন্দ্র করে চলে মাফিয়া চক্রের রমরমা কারবার। পানি, বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগও আছে এখানে। মাদক ব্যবসাসহ অসামাজিক কার্যকলাপও চলে। তারপরও মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয় এতটুকু আশ্রয়ের জন্য।
ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস উদ্বেগজনক। গত বছর কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সারাদেশের মত কক্সবাজার ও আশেপাশের এলাকার পাহাড় ধসে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন নিহত হয়েছিলেন। এর আগে গত কয়েক বছরে মারা গিয়েছিলেন অন্তত ৫০ জন। দুঃখজনক হল, বিয়োগান্তক এসব ঘটনা কারও মনে রেখাপাত করেনি। যদি করত, তাহলে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা নিশ্চয়ই ক্রমশ বৃদ্ধি পেত না। আশ্চর্যজনক হল, পাহাড় ধসে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে প্রতি বছর বর্ষার শুরুতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেয়া হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দলের নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা শহরের অধিকাংশ পাহাড় দখল করে এর পাদদেশে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়ে তুলে ভাড়া ও দখলস্বত্ব বিক্রির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ অনিয়মের অবসান হওয়া উচিত। এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।
পাহাড় ধসের জন্য দায়ী মূলত অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি হলেও প্রভাবশালীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় নির্বিঘ্নে এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে স্বল্প সময়ের জন্য প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষ ঢাকঢোল পিটিয়ে পাহাড়ে বসবাসরতদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেই দায়িত্ব শেষ করে। ঘূর্ণিঝড় বা বৃষ্টিপাতজনিত কারণে ২০১৭ অথবা ২০০৭ সালের মতো আরও একটি বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। এ অবস্থায় ‘মৃত্যুকূপে’ বসবাসকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা উচিত।
বিগত কয়েকবছরে মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক না হলে আমাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে সে দায় শোধ করতে হবে। কমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধ এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
তবে এবিষয়ে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলছেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নেবে প্রশাসন। প্রশাসনের হিসাবে জেলায় ৬৩ হাজার ৩৭৮টি পরিবারের প্রায় ২ লাখ মানুষ রয়েছে পাহাধসের ঝুঁকিতে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-