সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা; কক্সবাজারের বাজারঘাটার দুঃখ গেলো না

শহীদুল্লাহ্ কায়সার :

কক্সবাজার পৌরসভার বাজারঘাটার দুঃখ গেলো না। সুখ বলতে শুধু মাঝের মাত্র দুই বছর। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এর কৃতিত্ব দিচ্ছেন পৌরসভার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে।

তিনি ওই সময় একটি বড় ড্রেন দখলমুক্ত করে ভালোভাবে খনন করিয়েছিলেন। ফলে দেখা দেয়নি জলাবদ্ধতা। কিন্তু এখন আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। যে কারণে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে পর্যটন শহরের বাসিন্দাদের।
চলতি বর্ষা মৌসুমে যা রীতিমতো যন্ত্রণায় রূপ নিচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ভারী বর্ষণে যা অনেকটা বন্যায় রূপ নেয়। ওই সময় কক্সবাজার শহর প্রায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যানবাহন ছাড়া এক পাড়ের মানুষের অন্য পাড়ে যাওয়া হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য।
পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হলেই শরীরে লেগে যায় দুষিত পানি। এতে চর্মরোগসহ বিভিন্ন সংক্রামক দেখা দেয়। পরিধেয় কাপড়ও হয় নষ্ট। পাশাপাশি খোলা ড্রেনে পড়ে আহত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। ফলে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বৃষ্টির সময় হেঁটে কেউ বাজারঘাটা পার হতে চান না।

গতকাল বাজারঘাটায় গিয়ে দেখা গেছে, এলাকাটির বড় অংশজুড়ে জমে আছে পানি। দুই পাশে থাকা ড্রেন সংলগ্ন রাস্তার উপর স্তুপাকারে ময়লা-আবর্জনা। ড্রেনের স্ল্যাব দেয়ার অংশটুকু সম্পূর্ণ খোলা। পরিষ্কারের সময় ড্রেনের স্ল্যাব খুলে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে পুনরায় সেগুলো আগের স্থানে লাগিয়ে দেয়া হয়নি। যে কারণে জলাবদ্ধতায় পথচারীদের বুঝা কষ্টকর কোন অংশটুকু চলাচলের উপযুক্ত। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থেকে যায়। বেশিরভাগ দোকান মালিক নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সামনে নির্মাণ করেছেন ৪ ফুট উচ্চতার সাইড ওয়াল। যাতে বৃষ্টির পানি দোকানে প্রবেশ করতে না পারে।

বাজারঘাটার এই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ বৌদ্ধ মন্দির সড়কের বড় ড্রেনটি ভালোভাবে খনন না করা। কিছুদিন আগে কক্সবাজার পৌরসভা ড্রেনটি খননের জন্য একটি স্কেভেটর পাঠায়। সেটি দিয়ে কয়েকদিন খনন কাজ পরিচালনাও করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফিরিয়ে নেয়া হয় খননকাজে ব্যবহৃত স্কেভেটর। ফলে ড্রেনের বিশাল অংশ এখনো আগের মতো ভরাট অবস্থায় রয়ে গেছে।

তাছাড়া ইতঃপূর্বে পৌরসভার পক্ষ থেকে ড্রেনের যে অংশটি দখলমুক্ত করা হয়েছিলো। তা আবারো বেদখল হয়ে গেছে। ফলে ড্রেনের ওই অংশ দিয়ে পানি চলাচল করতে পারছে না। যে পানি বৌদ্ধ মন্দির সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অপেক্ষাকৃত নীচু জায়গা বাজারঘাটায় এসে জমা হচ্ছে। এলাকাটির দুই পাশের ড্রেন ভরাট হওয়ার কারণে সেই পানি সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা।

বাজারঘাটায় স্থাপিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত দুই ব্যক্তি জানান, গত দুই বছর তাঁরা বাজারঘাটায় জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখেননি। কিন্তু চলতি বছর আবারো সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে জমে যাচ্ছে পানি। গত কয়েকদিন ধরে পৌরসভার কর্মীরা সড়ক সংলগ্ন ড্রেন পরিষ্কারের কাজ করছেন। এতেও নেয়া হচ্ছে প্রতারণার আশ্রয়। পরিষ্কার করা হচ্ছে শুধুমাত্র স্ল্যাবের নিচের অংশটুকু। ফলে ড্রেনের মাঝখানের অংশ রয়ে গেছে ভরাট অবস্থায়। যে অংশটুকু পরিষ্কার করা হচ্ছে, তার ময়লা-আবর্জনা রাখা হচ্ছে রাস্তার উপর। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেই ময়লা-আবর্জনা আবারো ড্রেনে পড়ে যায়। ফলে ভরাট হয়ে যায় ড্রেন।

ড্রেন আর রাস্তা একাকার হয়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ ড্রেনে পড়ে আহত হচ্ছেন। শুধু রহমান ম্যানশন সংলগ্ন কক্সবাজার টায়ার ও ব্যাটারি হাউসের সামনের ড্রেনে পড়েই অন্তত ১০ থেকে ২০ জন আহত হচ্ছেন। ওই স্থানে স্ল্যাব খোলা অংশে বুঝা যায় নো কোন্টি ড্রেন আর কোথায় ফুটপাত। এ কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে বলেও জানান তাঁরা।

বাজারঘাটায় অবস্থিত কক্সবাজার বিল্ডার্স এর ব্যবস্থাপক স্বরূপ পাল বলেন, ড্রেন বন্ধ হওয়ার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি। নালার স্ল্যাব খুলে সেই অংশটুকুই পরিষ্কার করা হয়। একপাশের নালা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হলেও এই অবস্থা থাকতো না।

শহরের বার্মিজ স্কুল সড়কের বাসিন্দা মোঃ ইউছুপ বলেন, ড্রেন পরিষ্কার করে সেই ময়লা বাইরে রাখা হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাইরে রাখা ময়লা আবারো ড্রেনে পড়ে আবারো আগের অবস্থায় চলে যায়। পাশাপাশি বড় ড্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে খনন করা হচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাজারঘাটার জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব নয়।

আরও খবর