যেমন হবে এবারের বাজেট

ডেস্ক রিপোর্ট :

সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৩ জুন (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে নতুন (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এর আগে ১১ জুন বসছে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন (বাজেট অধিবেশন)। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এই বাজেট অধিবেশন আহ্বান করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য নতুন সরকার ও নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। সব কিছু মিলিয়ে অনেকেরই নজর রয়েছে এই সরকারের প্রথম বছরের বাজেটে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট উপস্থাপন হলেও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে গত কয়েকটি বছরের বাজেট তৈরির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সব কিছুর সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন তিনি। ফলে তার মতে, ‘প্রণয়ন নয়, বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ’।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের মূল বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার কম-বেশি। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসৃজন ও মানবসম্পদকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হচ্ছে এবারের বাজেট। ২০২০ সালে পালিত হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হবে ২০২১ সালে। এ কারণেই ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি হবে সবদিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি জাতির এই বড় দু’টি অর্জন উপলক্ষে সরকারের নানা পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি থাকবে এই বাজেটে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূতি উপলক্ষে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণা থাকবে এবারের বাজেটে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। এটি করতে পারলে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ১৬ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে সরকার আশা করছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়ও বিষয়টির ঘোষণা থাকছে। সে লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিস্তার প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাড়বে এ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা। বাড়বে দেশের সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণও।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হতে পারে ৮ শতাংশের বেশি। যদিও অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের নিচে রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার।
গুরুত্বের দিকে থেকে সরকার চলমান মেগা প্রকল্পগুলোয় বরাদ্দ কাড়ানো হবে। সবাধিক গুরুত্ব পাবে বিদ্যুৎ, সড়ক ও যোগাযোগ খাত। সড়ক ও যোগাযোগে নতুন কোনও প্রকল্প না নিয়ে কাজ করা হবে, চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নজর দেওয়া হবে। গ্রামকে শহর বানানোর নির্বচনি ইশতেহারের ঘোষণা বাস্তবায়নে এবারের বাজেটে বেশ গুরুত্ব পাবে ইন্টারনেটসুবিধা সংবলিত সংশ্লিষ্ট খাত।
আগামী (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার। যা ইতোমধ্যেই সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৪টি। ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে নতুন এডিপিতে মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর মধ্যে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। নতুন (২০১৯-২০) অর্থবছরের এডিপি বর্তমান (২০১৮-১৯) অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির পরিমাণ ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা।
চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের তুলনায় ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বাড়িয়ে আগামী (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। তবে, বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ এবারও পাঁচ শতাংশের মধ্যেই রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঘাটতির বাকি অর্থ কীভাবে জোগান দেওয়া হবে, তার দিক-নির্দেশনা বাজেট বক্তৃতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নের তুলনায় বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন কাজ। এটি রীতিমতো চ্যলেঞ্জিংও বটে, তবে দুঃসাধ্য নয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতোবিরোধ মিটে গেছে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই। কাজেই লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় কঠিন হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব মতো ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে একটি রেটের পরিবর্তে একাধিক রেট রাখা হবে। সিঙ্গেল রেটের বদলে মাল্টিপল রেট থাকছে। যা খুব সহনীয় হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আরও খবর