ডেস্ক রিপোর্ট – কক্সবাজারের টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসার টাকায় গড়ে ওঠা বিলাসবহুল তিনটি বাড়ি ক্রোক করেছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে শীর্ষ তিন ইয়াবা কারবারির দোতলা দুই ‘রাজপ্রাসাদ’সহ জমি ক্রোক করা হয়েছে। এখন এই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে পুলিশ। ক্রোক করা সম্পদের দাম ২৫ কোটি টাকার বেশি হবে জানায় পুলিশ।
যে তিন ইয়াবা ডনের সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে, তারা হলো−টেকনাফের নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়া (৭০) এবং তার দুই ছেলে নুরুল হক ভুট্টো (৩২) ও নূর মোহাম্মদ ওরফে মংগ্রী (৩৫)। এর মধ্যে নুরুল হক ভুট্টো সরকারের তৈরি করা ইয়াবার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তবে এর মধ্যে গত দুই মাস আগে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নুর মোহাম্মদ নিহত হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শনিবার সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টেকনাফের নাজিরপাড়া এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িগুলোতে অভিযান চালায়। এ সময় ওই তিন ইয়াবা ডনের দোতলা দুই বাড়ি ক্রোক করেছে পুলিশ। এ সময় বাড়িতে থাকা লোকজনকে বের করে দিয়ে বাড়িগুলো পুলিশ নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয়।
এক বাড়িতে থাকা এক নারী কান্না করে বলেন, ‘আমার এখন কেউ নেই। বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, আমি কোথায় যাবো? আমার পরিবারের সদস্যরা ইয়াবার সঙ্গে জড়িত নয়।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘এই প্রথম আদালতের নির্দেশে শনিবার সকালে তিন ইয়াবা ডনের বাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। এই বাড়িগুলো এখন পুলিশের হেফাজতে থাকবে। আদালতের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যে বাড়িগুলো ক্রোক করা হয়েছে সেগুলোর মালিক একসময় রিকশা ও ভ্যানচালক ছিল। এখন তারা সবাই কোটি টাকার মালিক।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্তে লবণ চাষি, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালকরা মরণনেশা ইয়াবা বেচাকেনা করে টেকনাফে আলিশান সব বাড়ি বানিয়েছে। সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে এসব বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে তালিকাভুক্ত বাবারা (ইয়াবা ব্যবসায়ীরা)। আবার অনেকে গ্রেফতার ও বন্দুকযদ্ধে নিহত হয়েছে। ইয়াবার টাকায় যারা অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছে, পর্যায়ক্রমে তাদেরও একই পরিণতি হবে।’
ওসি আরও জানান, প্রতিবছরের ১৪ মে ক্রোক করা সম্পদের যাবতীয় আয়-ব্যয় সংক্রান্ত সার্বিক হিসাব আদালতে উপস্থাপন করবে পুলিশ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির দায়ের করা মামলায় এই আদেশ দেন আদালত। গত ২৩ মে এই রায় দেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ। এই প্রথম মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় আদালত এই ধরনের আদেশ দেন।
অভিযান পরিচালনাকারী দলে থাকা ওসি (তদন্ত) এমএস দোহা বলেন, ‘ইয়াবার টাকায় টেকনাফে অনেকে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়েছেন। তার মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ী ওই তিন বাড়ি দেখলে মনে হয় এটা যেন কোনও রাজার বাড়ি। এতো সুন্দর বাড়ি ঢাকা শহরে চোখে পড়েনি। এই প্রথমও কোনও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বাড়িসহ সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-