ইয়াবার সঙ্গে জড়িত সাংবাদিকদের আইনের আওতায় আনুন- মোহসিন উল হাকিম

ইয়াবা চোরাকারবারীর সঙ্গে কিছু সাংবাদিকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শোনা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলেন, পাবলিকে বলে, এমন কী আমরা সাংবাদিকরাও সেকথা বলি। সেই সংবাদ আমরাই প্রচার করি।

সংবাদ প্রচার করা পর্যন্ত সাংবাদিকদের কাজ। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। আমরা সাংবাদিকরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত সাংবাদিকদের আইনের আওতায় আনুন। এই অপবাদ থেকে বাঁকী সাংবাদিকদের মুক্ত করুন।

সাংবাদিকরা দেশ চালায় না, এতো ক্ষমতাবানও না যে ইয়াবা চোরাকারবারীদের একাই আশ্রয় দিবে। সেজন্য কাজ করে সিন্ডিকেট। বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে অনেক টাকাও খরচ হয় নিশ্চয়ই। এই টাকার কিয়দংশ হয়তো সন্দেহভাজন সাংবাদিকদের পকেটে যায়। বাঁকী টাকা কোথায় যায়, সে খবর রাখেন নিশ্চয়ই?

শুনেছি, সাইফুল করিম দেশে এসেছেন। ইয়াবা চোরাকারবারীদের মধ্যে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। একজন সিআইপিও বটে। চোখের সামনে দিয়ে ডালপালা নিয়ে বেড়ে উঠলো যেই ফার্স্ট ক্লাস সিন্ডিকেট, তাকে কী শুধু কয়েকজন অখ্যাত সাংবাদিক টেনে এনেছে এতোদূর? সিন্ডিকেটের বাঁকীদের নাম পরিচয় নিশ্চয়ই জানেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করেন, আইনের আওতায় আনেন। সাইফুল করিমরা কিন্তু ইদানিং পলাতক। ইয়াবা খাইয়ে পুরো জাতিকে ধ্বংস করে উনি টাকা কামিয়েছেন, বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন আপনাদের চোখের সামনে। তখন তাকে স্পর্শও করা হয়নি কেন? কেউ এর জবাব দিবেন? এই নিকৃষ্ট অপরাধীদের বাড়তে দিয়েছেন কেন? এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ লাগে?

মাস খানেক আগে আমার কক্সবাজারের সহকর্মী ছোট ভাই ইমরুল কায়েস জানালেন, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ইয়াবার গডফাদার সাইফুল করিম তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অডিও ও ভিডিও কলে কথা হচ্ছে। কান্নাকাটি করে আত্মসমর্পনের সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি।

এর পর পরই বিষয়টি জানান ইমরুল। ইয়াবা চোরাকারবারীদের আত্মসমর্পনকে আমি নৈতিক ভাবে সমর্থন করি না। আমার প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তও একই। তাই কথা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেই। সেই অনুযায়ী আমাদের ইমরুল কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের সাথে সাইফুলের যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

এর আগেও গত বছরের জুলাই আগস্ট মাসে ইমরুলের মাধ্যমে ইয়াবা কারবারীরা আত্মসমর্পনের কথা জানিয়েছিলো। বিতর্কিত বিষয় হিসেবে আমরা সেবারও এই দূতিয়ালীর দায়িত্ব নেইনি। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত।

কক্সবাজারে সবাই যখন সাইফুল করিমের বিষয়ে চুপ, তখন এই ইমরুল ই তাকে নিয়ে সংবাদ করেছেন। চাপাশের থ্রেট, অনেক টাকার অফার তুচ্ছ করে সদর্পে বিষাক্ত এই কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ইমরুলের বিরুদ্ধে সাইফুল করিম ফেসবুক স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। এখন সেই লোকটিই ইমরুলের কাছেই আশ্রয় নিতে এসেছিলো। আমার ছোটভাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সেজন্য ধন্যবাদ।

ইতিমধ্যে কক্সবাজারে শতাধিক ইয়াবা চোরাকারবারী আত্মসমর্পণ করেছে। সেই প্রক্রিয়ায় চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সাংবাদিক আকরাম মধ্যস্ততা করেছেন। আবারও একটি আত্মসমর্পণ হতে যাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি বিভিন্ন মাধ্যমে। এই উদ্যোগ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তবে এটি যে সফল হবে না, তা বলার সময় আসেনি এখনও। আমি আশাবাদী মানুষ।

আরেকটা কথা… একটা পারসেপশন জনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেটি হলো, ক্ষুদে ব্যবসায়ী আর মাদকের ক্যারিয়ারদের চরম পরিণতি হচ্ছে। মাঝারি ও বড় মাদক কারবারীদের আত্মসমর্পণ করানো হচ্ছে। আমি এই পারসেপশন মানতে রাজি না। আমি বিশ্বাস করতে চাই, সবার জন্য সমান সুযোগ থাকছে। আগেই বলেছি, আমি আশাবাদী। কারণ, কক্সবাজারসহ সারাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন কাজ করছে।

লেখক
মোহসিন উল হাকিম
বিশেষ প্রতিবেদক
যমুনা টেলিভিশন

আরও খবর