পুলিশি হেফাজতে ‘ইয়াবা ডন’ সাইফুল

আবদুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন :

দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ থাকার পর অবশেষে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে ‘ইয়াবা ডন’ সাইফুল করিম। এজন্য শনিবার (২৫ মে) রাত থেকে পুলিশের হেফাজতে আছে সে। ঈদের পর কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সে আত্মসমর্পণ করবে। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১৫১ জনের মাদক কারবারির তালিকার এক নম্বরে ছিল এই সাইফুল।  

রবিবার (২৬ মে) রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১১টার দিকে দুবাই থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে ‘ইয়াবা ডন’ হাজি সাইফুল করিম। এসময় ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে যুক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে হেফাজতে নেয়। রবিবার (২৬ মে) সকালের দিকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে নেওয়া হয় তাকে। এখন পুলিশ লাইনে রাখা হয়েছে তাকে। ঈদের পর একটি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অন্যান্য ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করবে সে।

তবে এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এরকম কোনও তথ্য নেই। তবে যদি এরকম হয়ে থাকে, তাহলে এটি শুধু পুলিশের নয়, পুরো দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে সরকারের একটি সফলতা। এই ধরনের ইয়াবা ডন আত্মসমর্পণ করলে নিঃসন্দেহে ইয়াবা পাচার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো ট্রলারেন্স সফলতা পাবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কাগজে কলমে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থলবন্দরের একজন সিএন্ডএফ (আমদানি-রফতানিকারক) ব্যবসায়ী। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে কাঠ আমদানি করে সে। তবে কাঠ আনার আড়ালে এনেছে ইয়াবার চালান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্বশেষ তালিকায় ‘এক নম্বর ইয়াবা ব্যবসায়ী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার এই হাজী সাইফুল করিমকে। সাইফুল করিমের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলামও এই ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও তার মামা, মিয়ানমারে মংডুর আলী থাইং কিউ এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহিমও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

প্রত্যেক গোয়েন্দা রিপোর্টের শীর্ষে সাইফুল করিম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে। গত মাসেও দুদকের পক্ষ থেকে তার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৩ মে সাইফুলের ছোট ভাই মাহবুব ও রাশেদকে টেকনাফ নিজ বাড়ি থেকে ১০ হাজার ইয়াবা ও ৪টি অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম বার্তা টুয়েন্টিফোর নামক একটি পোর্টালের সম্পাদক পরিচয় দিতেন তারা। এর আগে গত বছর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হন বড় ভাই মুন্না।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়া পাড়া এলাকার মো. হানিফ প্রকাশ ওরফে হানিফ ডাক্তারের ছেলে সাইফুল করিম। চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ পড়াশোনার সময় ১৯৯৮ সালের দিকে নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পণ্য কেনা-বেচায় সহায়তা করে খরচ জোগাতেন তিনি। অভাব অনটনে দিন চলতো তার। ওই সময় তার দাদার বাড়ি মিয়ানমারের মংডু এলাকার ইয়াবা ডন ও মিয়ানমারের মোস্ট ওয়ান্টেড মগা সুইবিন নামক এক আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে সাইফুলের। তাদের পৃষ্টপোষকতায় ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে এসকে ইন্টারন্যাশনাল নামে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসা শুরু করে সে। ২০০১ সালের দিকে টেকনাফের বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহর বোনকে বিয়ে করে টেকনাফ স্থলবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সাইফুলের শ্যালক জিয়াউর রহমান উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ২০০১ সালের দিকেই মিয়ানমার থেকে পণ্য অমদানির আড়ালে কৌশলে ইয়াবা আমদানি শুরু করে সাইফুল।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, মিয়ানমারের ইয়াবা কারখানার মালিকরা লাখ লাখ ইয়াবার চালান পাঠায় সাইফুলের কাছে। কারণ মিয়ানমারে স্থাপিত ৩৮টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত মাল বিক্রির একমাত্র মার্কেট হচ্ছে। এই ইয়াবা ব্যবসার সুবিধার্থে মিয়ানমার-বাংলাদেশ চলাচলের জন্য একাধিক জাহাজ কিনেছে সাইফুল।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতি প্রথম দফায় ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছে কক্সবাজারে। তখন সাইফুল করিমের আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এখন দ্বিতীয় দফা আত্মসমর্পণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে সে।   

আরও খবর