রোহিঙ্গা পাচার ঠেকাতে বেড়া দেবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির

রোহিঙ্গা পাচারের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কথা ভাবছে।

বাংলাদেশের উদ্বাস্তু ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম বুধবার এই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন যে, এ ব্যাপারে ২০১৭ সালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে তখনো বিষয়টি সঙ্কটজনক পর্যায়ে উপনীত না হওয়ায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি।

কালাম বলেন, বেড়া দেয়া হলে রোহিঙ্গাদের পাচার হওয়ার ঝুঁকিই শুধু কমবে না তাদের শিবির এলাকা থেকে বাইরে যাওয়ার প্রবণতাও কমবে।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাস করছে এবং রোহিঙ্গা ইস্যুটির প্রতি যথাযথ নজর দেয়া না হলে তা গোটা অঞ্চলকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে।

কর্ম ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদার অভাবে বিরক্ত হয়ে উদ্বাস্তুরা প্রায়ই শিবির থেকে পালিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কালাম বলেন, এই সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব মিয়ানমারের এবং এদেরকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দিতে হবে।

স্থানীয় একটি পত্রিকা লিখে যে, সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন রোহিঙ্গাদের পাচারের হাত থেকে রক্ষা ও শিবির থেকে তাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে বেড়া দেয়া প্রয়োজন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পত্রিকাটিকে বলেন, অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ করতে আমরা কক্সবাজারে শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজারের এক পুলিশ কর্মকর্তা এই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমাদেরকে প্রায় প্রতিদিন বঙ্গোপসাগর পথে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাচার ঠেকাতে হচ্ছে। উদ্বাস্তু শিবিরের চারপাশে কোন সীমানা নেই। থাকলে এ ধরনের ঘটনা কম হতো।

এর আগে বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের ১১টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া দিতে ৩১.৯ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বেড়া সমাধান নয়

তবে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের ক্যাম্পেইন সমন্বয়কারী নায়ে সান লুইন এই বার্তা সংস্থাকে বলেন যে, শিবিরগুলোতে যে সমস্যা চলছে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সেগুলোর সমাধান করা যাবে না।

তিনি বলেন, উদ্বাস্তুরা যাতে অপরাধী ও পাচারকারীদের হাতে না পড়ে সে জন্য শিক্ষা দেয়া দরকার। শিবিরগুলো থেকে মানবপাচারের সঙ্গে যে মূল গ্রুপটি জড়িত সেটি ধ্বংস করতে হবে। কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হলে মনে হবে রোহিঙ্গাদের বন্দী শিবিরে রাখা হয়েছে। আমি নাজি বন্দী শিবির দেখেছি। আমি চাই না রোহিঙ্গাদের সেরকম কোন স্থানে রাখা হোক।

জাতিসংঘের ভাষায় রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবেচেয়ে নিপীড়িত জাতি।

এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী দমন অভিযান শুরু করলে সেখান থেকে নারী-পুরুষসহ সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ২৪,০০০-এর বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করেছে বলে অন্টারিও ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট এজেন্সির এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়, ৩৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এছাড়া ১১৪,০০০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে পেটানো হয়েছে।

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েকে ধর্ষণ করেছে এবং ১১৫,০০০ হাজার রোহিঙ্গা বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া ও আরো ১১৩,০০০ ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ ধরনের নিপীড়নকে জাতিসংঘ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার শামিল বলে উল্লেখ করেছে।

আরও খবর