কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা পাচার চক্রে এনজিও,মানবপাচারকারী ও পাসপোর্ট অফিসের দালাল

অনলাইন ডেস্ক :

মিয়ানমারে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি সাজিয়ে আকাশপথে বিদেশে পাচারের বাণিজ্যে নেমেছে একটি চক্র। এই চক্রে জড়িত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) রোহিঙ্গা প্রতিনিধি, মানবপাচারকারী দালাল (আদম ব্যবসায়ী) ও পাসপোর্ট অফিসের দালাল।

রাজধানীর খিলক্ষেতের নামাপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে নারী-শিশুসহ ২৩ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কর্মকর্তারা।

ডিবির তদন্তে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবির থেকে দু-তিনজন করে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে ঢাকায় নিয়ে আসে এনজিওর রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা। মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান তাদের ঢাকায় ভাড়া বাসায় রেখে শুদ্ধ বাংলা ভাষা ও আদব-কেতা শেখায়। পাসপোর্ট অফিসের দালালদের মাধ্যমে ভুয়া পরিচয়ে তাদের পাসপোর্ট করা হয়। এ জন্য ভুয়া পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করা হয়। এ অপকৌশলে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্টে মালয়েশিয়ায় পাচারকারী এই চক্রের হোতা ইব্রাহিম খলিল এখনো পলাতক। বাসার মালিকসহ তাঁর চার সহযোগী রিমান্ডে জানিয়েছে, নামাপাড়ার ওই বাসা ও মালিবাগের একটি বাসায় রোহিঙ্গাদের রেখে প্রশিক্ষণ দিত চক্রটি। স্থানীয় এনজিওর প্রতিনিধি রোহিঙ্গা আইয়ুব মোস্তাকিমসহ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের ঢাকায় নিয়ে আসত। এরপর মালয়েশিয়া পাঠাত তারা।

ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১০ মে ভোরে খিলক্ষেতের নামাপাড়ার কোহিনুর ভিলা থেকে ২৩ রোহিঙ্গাসহ ২৭ জনকে আটক করা হয়। রোহিঙ্গা আইয়ুব মোস্তাকিম, তাঁর স্ত্রী আসমা আক্তার, দালাল মোশারফ হোসেন শিপন ও খিলক্ষেতের বাড়ির মালিক ওয়ালিদ হোসেন কাজলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১১ মে তাঁদের আদালতের নির্দেশে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

আদালতের নির্দেশে ২৩ জন রোহিঙ্গাকে টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের পর রোহিঙ্গাদের নামে করা ৫৬টি পাসপোর্ট জাল কি না, তা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে। এই পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে কারা, কিভাবে জড়িত, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাচারকারীচক্রটির সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় এক ডজন দালাল জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি দালাল মিলে এই পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। স্থানীয় দালাল, বাড়ির মালিক, পাসপোর্টের দালালসহ অনেকেই জড়িত। কারা, কিভাবে জড়িত, তা নিয়ে কাজ চলছে।’

ডিবি সূত্র জানায়, মূল হোতা ইব্রাহিম খলিলের ব্যাপারে তথ্য পেয়ে তাঁর শাহজাহানপুরের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই বাসায় পুরুষ রোহিঙ্গাদের রাখা হতো। অভিযানের আগেই কয়েকজনকে নিয়ে পালিয়ে যান ইব্রাহিম। তবে বাসা থেকে তাঁর সহযোগী ও মেয়ের জামাই শিপনকে আটক করা হয়। আটককৃত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আয়েশা নামের এক নারী স্বীকার করেছেন তিনি পাচারকারীদের সহায়তা করেন। ঢাকার আলিফ নামে আরেকজনের তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা।

আইয়ুব মোস্তাকিমের মতো কয়েকজন রোহিঙ্গা আছে, যারা বাংলা বলতে পারে। তারা এনজিও কর্মকর্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে কাজ করে। এই সুযোগে তারা রোহিঙ্গাদের বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। এর বিনিমিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের শেষ সঞ্চয় এবং ত্রাণের সামগ্রী নেয়। এ দালালরা ইব্রাহিম খলিলের মতো কয়েকজনের কাছে রোহিঙ্গাদের তুলে দেয়।

ঢাকার উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, রামপুরা, মালিবাগসহ কিছু এলাকার ঠিকানায় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করা হচ্ছে। শনাক্ত হওয়া চক্রগুলো আগেও মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গাদের পাঠিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

আরও খবর