সম্প্রসারিত হচ্ছে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক

বিশেষ প্রতিবেদক :

অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এরই মধ্যে নাজুক হয়ে পড়েছে কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ সড়ক অবকাঠামো। তাই কক্সবাজারের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে একাধিক জরুরি  প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকারের  সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজার- উখিয়া ও টেকনাফে হঠাৎ কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে গেছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি দেশী-বিদেশী উন্নয়ন সেবা সংস্থাগুলোর (এনজিও) কর্মকা- বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এতে সড়কগুলোয় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে যানবাহনের সংখ্যা ও চাপ।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে সওজের অধীনে থাকা সড়ক-মহাসড়কের পরিমাণ ৫৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৫৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক।  জাতীয় এ মহাসড়কের ১৫৮ কিলোমিটারের মধ্যে কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফ সড়কের দৈর্ঘ্য ৭৯ কিলোমিটার। এ সড়ক দিয়েই কক্সবাজার শহর ও দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে সড়ক পথে চট্টগ্রাম হয়ে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত করেন দেশী-বিদেশী এনজিও সহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার কর্মী ও ত্রাণ সামগ্রী।

মাত্র ১৮ ফুট প্রস্তের এ সড়ক দিয়ে দৈনন্দিন নিয়মিত চলাচল কারী প্রাইভেট, গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াত ছিল । তাছাড়াও ২০১৭ সাল থেকে এ সড়ক দিয়ে  প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষাধিক  রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্য পরিবহন হয়ে আসছে। জাতিসংঘ সহ দেড় শতাধিক দেশী বিদেশী উন্নয়ন সহযোগী সেবা সংস্থা গুলোর কর্মীদের এক হাজারের মত যানবাহন চলাচল করছে। এতে অতিরিক্ত যাত্রী ও ভারী পণ্যবাহী যানবাহনের চাপে সড়কটিতে সৃষ্টি হয় প্রচ- যানজট।

এসময়ের মধ্যে অতিরিক্ত এ ধরণের যানবাহন যাতায়াতের কারণে ইতিমধ্যে এ সড়কের উখিয়া অংশে মরিচ্যা, কোটবাজার,উখিয়া সদর,কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালী বাজার ও বাস স্টেশনে সড়কের চিহ্ন খুজে পাওয়া কঠিন।

ভারী ও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে কক্সবাজার – উখিয়া – টেকনাফ সড়কের উখিয়া অংশের মরিচ্যা বাজার থেকে পালংখালী পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের প্রায় সবখানে বড় বড় গর্ত,খানা,খন্দক,সড়ক জুড়ে ফাঁটলের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচল রীতিমত চরম ঝুঁকির মূখে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। এসব কারণে দ্রুত সময়ে সড়কটি সম্প্রসারণ ও সংস্কারের  লক্ষ্যে একটি জরুরি  প্রকল্প গ্রহণ করেছে সওজ।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) জরুরি  অর্থায়নে ৭৯ কিলোমিটার সড়কটি বিদ্যমান ১৮ ফুট থেকে উভয়  পাশে ৩ ফুট করে সম্প্রসারণ করে ২৪ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে।

বাজার ও বাস স্টেশন অংশগুলোয় এটি প্রায় ২৮ থেকে ৪৫  ফুটে বর্ধিত করা হবে। বাজার ও বাস স্টেশন অংশে সম্প্রসারিত সড়ক হবে আরসিসি পেভমেন্ট ঢালাই। যা বিটুমিন সড়কের চেয়ে অনেক টেকসই ও অধিক ধারণ ক্ষমতা সক্ষম বলে সওজ সূত্রে জানা গেছে। 

পাশাপাশি এ সড়কের ২৭টি  ছোট-বড় কালভার্টকে সড়কের চেয়েও বড় আকারে সম্প্রসারণ করা হবে। তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হবে ৪৫৮ কোটি টাকার ৭৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে এ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পটির দুটি প্যাকেজের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তৃতীয় প্যাকেজের কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুত  শুরু হবে বলে আশা করছে সওজ কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ – সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান,  প্রথম প্যাকেজের আওতায় কক্সবাজারের লিংক রোড থেকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে ১২২ কোটি টাকা এবং উখিয়া ফায়ার সার্ভিস থেকে টেকনাফের উনচিপ্রাং পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে । প্রকল্পের অবশিষ্ট টাকায় টেকনাফ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণে শিগগিরই কাজ শুরুর আশা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এছাড়া যানজট নিরসনে কোর্টবাজার, মরিচ্যা, উখিয়া সদর, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালীসহ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ  স্টেশনগুলোকে প্রায় ৪৫ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে।

সওজ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কটি সম্প্রসারণ হলেও একই সড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও চলছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে (সার্ভিস লেনসহ) উন্নীত করতেও একটি প্রকল্প সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা আশ্রয় দাতা স্হানীয় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের সমস্যা অনুধাবন করতে পেরেছেন। তাই তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত উখিয়া ও টেকনাফ বাসী ও জনপথের অবকাঠামো গত উন্নয়নে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত আন্তর্জাতিক সহায়তার এক চতুর্থাংশ অর্থ সহায়তা বরাদ্দের ব্যবস্হা রেখেছেন। আগামী কয়েক বছরে এখান বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে বলে উখিয়া ও টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার চৌধুরী জানান।

এ বিষয়ে কক্সবাজার  সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, আগের পুরনো সরু সড়কের পরিবর্তে চার লেনের সড়ক ছাড়া প্রতিদিনই বাড়তে থাকা যানবাহনের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে । এডিবির অর্থায়নে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ কাজ ২২-২৫ শতাংশ এগিয়েছে। এ সড়কের উভয় পাশে বিদ্যুতের খুঁটি, ভূ গর্ভস্হ টিএন্ডটি ও ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড লাইন অপসারণে বিলম্বিত হওয়ায় কাজের অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সড়ক সম্প্রসারণ কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

আরও খবর